প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:১১ (বুধবার)
পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া যায় ‘বাসিয়া হাটি’ মেলায়

ছবি: সংগৃহীত।

শুক্রবার বিকালে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মিলনমেলার আমেজে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দ, ঢাক-ঢোলের বাজনা আর মাইক থেকে ভেসে আসা আদিবাসী গান পুরো মেলার পরিবেশে মূর্ছনার ছোঁয়া যোগ করেছিল।

দীর্ঘ ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ‘বাসিয়া হাটি’ নামে পরিচিত। দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন আয়োজিত এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ ছুটে আসেন। মেলার মূল আকর্ষণ যুবক-যুবতীরা পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়াও।

মেলায় উপস্থিতদের সাজসজ্জাও নজর কাড়ে। রঙিন শাড়ি, মাথায় ফুল, হাতে কাঁচের চুড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক-এ যেন এক রঙের উৎসব। এছাড়া কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, ঝিনুক, মাটির পাত্র থেকে শুরু করে দা-কুড়াল, হাঁড়ি-পাতিল পর্যন্ত নানা জিনিসের দোকান পসরা মেলায় আলাদা মাত্রা যোগ করে।

মেলা শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, এটি আদিবাসী সমাজের একটি সামাজিক মিলনমেলা। দিনভর নাচ-গান, বাজনার পরিবেশনা ও তরুণ-তরুণীদের আড্ডার মাধ্যমে মেলার আনন্দ বজায় থাকে। শুধু সাঁওতাল নয়, হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও মেলায় অংশ নেন।

এ বছরও শারদীয় দুর্গোৎসবের পরের দিন শুক্রবার বিকেল ৪টায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়া, পঞ্চগড় ও নীলফামারী থেকে হাজারও মানুষ গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভিড় জমিয়েছে।

তবে মেলার এক বিশেষ দিক হলো যুবকদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন। আদিবাসী তরুণী এঞ্জিলিনা মার্ডি জানিয়েছেন, আগে এই মেলায় পরিবারের মাধ্যমে বিয়ে ঠিক হতো, তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন এই রীতি অনেকটাই কমে গেছে। অধিকাংশ যুবক-যুবতী এখন স্কুল-কলেজে ব্যস্ত।

আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আহ্বায়ক জোসেফ হেমরম বলেন, ‘পুর্বপুরুষেরা মেলা শুরু করেছিলেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি। আনুমানিক দুশ বছর ধরে এটি চলে আসছে। তবে আগে যেভাবে বিয়ে হতো, এখন আর সেই প্রচলন নেই।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সমাজসেবক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুরুল ইসলাম মনজু বলেন, ‘মেলা আমাদের দীর্ঘ দিনের সম্প্রীতির নিদর্শন। সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এখানে মিলিত হন। কয়েকশ বছরের পুরোনো এই মেলা যেন আমাদের সংস্কৃতি ও আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে।’