দেশের পাঁচটি বেসরকারি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হবে এবং পরবর্তীতে সময় অনুযায়ী বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে।
নতুন ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি ব্যাংক হলো-ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকার গত ৮ সেপ্টেম্বর আট সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমদ।
এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিরা।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নতুন ব্যাংকটি পাঁচ ব্যাংকের সব দায় ও সম্পত্তি গ্রহণ করবে। অনুমোদিত মূলধন থাকবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকবে। এপর্যন্ত সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করবে, যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি নগদ, বাকি ১০ হাজার কোটি সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের শেয়ার রূপান্তর করে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের গ্রাহক ও অন্যান্য পাওনাদারদের ঋণের একাংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ‘পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আগামীকাল উপস্থাপিত হবে। এটি কোনো তাড়াহুড়া নয়, বরং গভীর চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে নেওয়া উদ্যোগ।’
নতুন ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শুরুতেই থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হাতে, ব্যাংকটি নিবন্ধন হবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেবে।
উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিলে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এবং ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী পাঁচ ব্যাংকের মালিকদের কোনো দাবি পরিশোধ হবে না, তবে ব্যক্তি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
নতুন অধ্যাদেশে আমানত সুরক্ষা বাড়ানো হবে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত, যা দুই লাখ টাকার কম আমানতের জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘নতুন ব্যাংক গঠন ভালো উদ্যোগ, কিন্তু এটি মূলত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের সমষ্টি, তাই সরকারি বোঝা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে পূর্বপরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল।’
পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতির জন্য কমিটি এক মাস ধরে কাজ করেছে।