আওয়ামী শাসনামলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করে বারবার বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দ। (ছবি সংগৃহীত)
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির সম্প্রতি বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের নিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে সভা-সমাবেশ করছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। এসব নেতাদের প্রায় সকলেই আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে অভিযুক্ত। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী সখ্যতাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। অনেকে প্রাথমিক সদস্যপদও হারিয়েছিলেন।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এসব বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে সভা করার ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারা অভিযোগ করছেন, দলের যেসব নেতারা প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন, তাদের উপস্থিতিতে হুমায়ুন কবিরের মতো কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা সভা করায় সংগঠনের শৃঙ্খলা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
একজন স্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাদের কারণে উপজেলা বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের দিয়েই আবার সভা করানো হচ্ছে; এটা তৃণমূলের প্রতি অবিচার।’
এদিকে অতীতে সোহেল চৌধুরীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান লিলু মিয়া। এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয় নেতারা সোহেলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমানের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে দলের ভেতরে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্বনাথে পৌর ও উপজেলাবাসীর ব্যানারে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হুমায়ুন কবির।সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া। যৌথ পরিচালনায় ছিলেন যুবদল নেতা আমির আলী ও রুমেল আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল, যুক্তরাজ্য কলচেষ্টার বিএনপির সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আবদাল মিয়া ও দেওকলস ইউনিয়ন বিএনপি নেতা খায়রুল আমিন আজাদ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া, সেই সাথে বিশেষ অতিথির মধ্যে বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল, যুক্তরাজ্য কলচেষ্টার বিএনপির সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বালাগঞ্জ উপজেলার সাবক চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া ও দেওকলস ইউনিয়ন বিএনপি নেতা খায়রুল আমিন আজাদ। তারা সবাই বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত হয়েছিলেন।
বিগত সরকারের আমলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন ও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। কিছু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ছিলো আওয়ামী লীগ ও সাবেক এমপি গণফোরাম নেতার সঙ্গে সখ্যতা।
২০১৯ সালের ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিএনপি স্থানীয় এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সিলেট জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থাকা বিশ্বনাথের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা সোহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদস্য মিছবাহ উদ্দিন, বালাগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার উপদেষ্টা আবদাল মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলার সদস্য গোলাম রব্বানী নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে সুহেল চৌধুরীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক একাধিকবারের চেয়ারম্যান লিলু মিয়া।
সেবার জেলার মধ্যে বিএনপির মোট ৩২ জন নির্বাচন করে তাদের কেউই বিজয়ী হতে পারেননি।আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ও ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ না নেওয়ার কারণ দেখিয়ে বহিষ্কৃতরা আবার দলে ফেরার জন্য কেন্দ্রে আবেদন করলে ১৪ জন নেতা ও নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম, উপদেষ্টা রশিদ আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি লুৎফুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সদস্য মিসবাহ উদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য আহমদ নূর উদ্দিন, মহানগর ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক আশরাফ উদ্দিন, জেলা মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজমা বেগম, বিশ্বনাথ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ইয়াসমিন, জেলা মহিলা দলের সদস্য বেগম স্বপ্না শাহীন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি গোলাম রব্বানী, জেলা বিএনপির জিল্লুর রহমান ও জেলা মহিলা দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী ইকবাল।
তবে বিশ্বনাথের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা সোহেল আহমদ চৌধুরী, বালাগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার উপদেষ্টা আবদাল মিয়ার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
এর পর ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম রুহেল (চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদ), পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ (চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদ), উপজেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক খায়রুল আমীন আজাদ (চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, (দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদ) ও দৌলতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মো. আরব খানকে (চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ) দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়।
বিএনপি স্থানীয় ইউপি নির্বাচন বয়কট করলেও, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তারা অংশ নেন নির্বাচনে। এতেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃংঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে স্থানীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় তাদেরকে আজীবনের জন্য বিএনপির সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বহিস্কার করেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রব, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ কাওছার খান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না বেগম।
তাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়া বিগত সরকারের আমলে সুহেল চৌধুরীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক একাধিকবারের চেয়ারম্যান লিলু মিয়া। লিলুকে হেনস্থার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বিএনপির নেতারা। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের নেতা মুহিবুর রহমানের সঙ্গে সুহেলের সখ্যতা নিয়েও বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন অস্বস্তিতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের যোগাযোগ বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে এমন কার্যক্রম সংগঠনের ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা মনে করছেন।