ছবি: সংগৃহীত।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনা নিয়ে দুই দিনে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে আলোকচিত্রী আলী হোসেনও রয়েছেন।
২৪ বছর বয়সী আলী হোসেন ঢাকায় পেশায় আলোকচিত্রী। ভাইয়ের বিয়েতে বাড়ি এসেছিলেন। নদীতে বালু লুটের ঘটনা দেখে তিনি ভিডিও ও ছবি তুলেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠান। তার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইজারাদারের দুটি মামলায় আলী হোসেনসহ আরও ৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা প্রায় ৫০ জন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাত আরও ২০ জন। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আলী হোসেন এই মামলায় ৩৬ নম্বরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বালু লুটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, তথ্য দিয়েছি, অথচ এখন আমি আসামি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাইমিনুল হক বলেন, আসামির তালিকা যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু আলী হোসেনের নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিষয়টি পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে।
এর আগের দিনই ইজারাদারের পক্ষে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩০ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই মামলায় মূলত বালু উত্তোলনের বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের নাম আসামি করা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত বালু উত্তোলনকারীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
নদী তীরের বাসিন্দা ও পরিবেশ আন্দোলনকারী কাসমির রেজা বলেন, ‘কারা বালু লুট করেছে, এলাকাবাসী তা জানে। হুমকি দিয়ে মামলা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
ইজারাদার নাছির মিয়া দাবি করেছেন, যারা প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদেরই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাজু আহমেদ বলেন, প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর না হলে শুধুমাত্র মামলা দিয়ে অপকর্ম বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তদন্ত শেষে দোষী ও নির্দোষ সবাই চিহ্নিত হবে এবং নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।
তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর দুটি বালু মহাল এবার ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। মামলায় জটিলতার কারণে গত পাঁচ মাস বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। চলতি মাস থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।