প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:০৯ (বুধবার)
রোববার ঢাকায় সিলেট বিভাগের বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা: প্রশ্ন থাকছে ১০টি

ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় তলব করেছে দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে এসব প্রার্থীর সাক্ষাৎ হবে আগামী রোববার বিকেল তিনটায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এ বৈঠককে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা হিসেবে দেখছে বিএনপি।

এবার প্রার্থীর সাক্ষাৎকার বা তদবির নয়, নিজস্ব আমলনামার তথ্যকেই বিবেচনা করে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে বেশ দৃঢ় বিএনপি। এই আমলনামার নাম ‘ডাটাবেজ’। বিএনপির এ ডাটাবেজে মূল ৫টি যোগ্যতা ও ৫টি অযোগ্যতার প্রধান অপশন রাখা হয়েছে। ওই ঘরগুলো পূরণ করলে ডাটাবেজ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় র‌্যাংকিং দেবে। তা সরবরাহ করা হবে মনোনয়ন নির্ধারণ কমিটিকে। কিছু বিশেষ কারণ ছাড়া এই র‌্যাংকিংকেই প্রধান্য দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থী যাচাইয়ে যোগ্যতা হিসেবে—
১. প্রার্থীর অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি
৩. জনসম্পৃক্ততা
৪. সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা
৫. পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও ত্যাগ বিবেচনা করা হচ্ছে।

ডিজিটাল ডাটাবেজ ও অনলাইন স্ক্রুটিনিতে এই ৫ যোগ্যতার পাশাপাশি অযোগ্যতা নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে—
১. কখনো দলের সঙ্গে বিদ্রোহ ছিল কি না,
২. রাজনৈতিক মামলা ছাড়া ফৌজদারি অপরাধের তথ্য আছে কি না,
৩. গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা নিয়েছেন কি না,
৪. ৫ আগস্ট ২০২৪–এর পর স্থানীয় রাজনীতিতে অপরাধে সম্পৃক্ততা আছে কি না,
৫. নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না।

এই ১০ শ্রেনীর প্রশ্নের আরো ৫ থেক ৭ টি উপশ্রেণী রয়েছে। প্রাপ্তনতথ্য একত্র করে প্রতিটি প্রার্থীর প্রোফাইল বিশ্লেষণ চলছে।

রোববারের বৈঠকে অংশ নিতে বিভাগের শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন অথবা বিমানের টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

জানা গেছে, বৈঠকে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের প্রতিটি প্রার্থীর সাংগঠনিক অবস্থা, ভোটার সংযোগ, জনপ্রিয়তা ও মাঠপর্যায়ের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। বিএনপি এবার প্রার্থী বাছাইয়ে তথ্যভিত্তিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।

মাঠে সক্রিয় নেতাদের পাশাপাশি প্রবাসী, যুবনেতা ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরাও যাচাইয়ের আওতায় আছেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করেছেন— যেখানে সিলেট ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, প্রতিটি আসনে কেবল একজন প্রার্থীই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থিতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তারেক রহমান।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে অধিকাংশ প্রার্থী বিমানযোগে ঢাকায় যাচ্ছেন। যারা সড়কপথে যাবেন, তারা শুক্রবার রওনা হবেন। সিলেট বিভাগের শতাধিক প্রার্থীই এখন রাজধানীমুখী।

সিলেট বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক মেয়র ও মনোনয়নপ্রত্যাশী জিকে গউছ ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন জানিয়েছেন, তিনি ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন জানিয়েছেন, তিনি ঢাকায় বৈঠকে যোগ দেবেন। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিলেট-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক হলেও দলই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। শুধু সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলাতেই প্রার্থী হতে আগ্রহী ২১ জন রয়েছেন।

বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে সিলেট জেলায় রয়েছে ৬টি আসন। সিলেট-১ আসনে আলোচনায় রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট-২ আসনে রয়েছেন নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং প্রবাসী বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির। জানা গেছে, তারেক রহমান হুমায়ুন কবিরকে সংসদ নির্বাচনে না যেতে পরামর্শ দিয়েছেন, ফলে লুনার প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।

সিলেট-৩ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম. এ. মালিক, প্রবাসী নেতা ব্যারিস্টার এম. এ. সালাম, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ খান জামালসহ সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সিলেট-৪ আসনে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম চৌধুরীসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেট-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন (চাকসু মামুন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ফাহিম আল চৌধুরী ও জাকির হোসেনসহ ছয়জন।

সিলেট-৬ আসনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল হাসান চৌধুরী শাহিনসহ সাতজন প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান— এ দুজনের মধ্যে একজন মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দলীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, প্রাথমিক খসড়া তালিকার কাজ প্রায় শেষের পথে। যোগ্যতা ও অযোগ্যতার তথ্য ডাটাবেজে সংযুক্ত করা প্রায় শেষ পর্যায়ে। রোববারের বৈঠকে একক প্রার্থী ঘোষণার তালিকা হয়তো দেওয়া নাও হতে পারে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী ও প্রার্থিতা নিয়ে কঠোর নির্দেশনা আসতে পারে।

দলীয় সূত্র অনুযায়ী, রোববারের বৈঠকে সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের সাংগঠনিক অবস্থা, মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা যাচাই শেষে প্রাথমিক খসড়া তালিকা তৈরি করা হবে। এতে প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থী রাখা হবে। পরে সেখান থেকে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় টিম চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে। 

আর তখন যাতে বিশ্বনাথের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মতো সংঘাত সংঘর্ষ না হয় সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে দলের হাইকমান্ড থেকে বলে জানিয়ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।