প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৯:৫৭ (বুধবার)
কোম্পানীগঞ্জে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই: বিলীন হওয়ার পথে মসজিদ, কবরস্থান, বাজার ও ফসলি জমি

ছবি: সংগৃহীত।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে বালুখেকোদের বেপরোয়া তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে একাধিক গ্রাম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল, মসজিদ, কবরস্থান ও বাজার এলাকা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বেরিবাঁধসহ আশপাশের এলাকা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর বাজার (বুধবারি বাজার) থেকে ঢালারপাড় চকবাজার পর্যন্ত বেরিবাঁধের গা ঘেঁষে ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে প্রতিদিন ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে বেরিবাঁধের একাধিক অংশ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রামে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

মোস্তফানগর বাইতুন আমান জামে মসজিদের বাউন্ডারির একেবারে পাশে দিন-রাত চলছে বালু উত্তোলন, ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে মসজিদটি।

এছাড়া মোস্তফানগর, শওকত নগর, ঢালারপাড়, দ. ঢালারপাড়, উ. রাজনগর, ইসলামপুর বাজার ও চকবাজার এলাকার বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, আগে এসব ফসলি জমিতে আমন ধান, বাদাম, তরমুজ ও বিভিন্ন শস্য আবাদ করা হতো। এখন অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে হাজার হাজার একর জমি নদীতে পরিণত হয়েছে। রাজনগর ভোলাই কবরস্থানও প্রায় বিলুপ্তির পথে।

অভিযোগ রয়েছে, বালু লুটপাটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা জড়িত। নাম এসেছে ১নং পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিহাদ আলীর ছেলে ও বিএনপির উপজেলা যুবদল সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শওকত আলী, ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার ভাইদের নাম।

তাদের সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতা ও ৩নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওদুদ আলফু, যিনি বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছেন।

এছাড়া আরও অনেকে এই বালু বাণিজ্যে জড়িত বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

ইজারাদার হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি কাউকে বলিনি ইজারার বাইরে বালু তুলতে। আমি আমার জায়গা থেকে ইজারা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করছি।’

তবে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন সরাসরি বালু বিক্রি করছেন এবং বালুর জায়গা নিয়ে বিরোধেও জড়াচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অর্থের বিনিময়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে।

শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন ও থানা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রতন শেখ বলেন, ‘এটি ভূমি সংক্রান্ত বিষয়। আমাদের এখতিয়ার নেই। ইউএনও নির্দেশ দিলে আমরা তাদের সঙ্গে অভিযানে যাই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিন মিয়া বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। প্রয়োজনে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’

স্থানীয়দের আশঙ্কা, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে শিগগিরই কয়েকটি গ্রামসহ ইসলামপুর বাজার, মসজিদ ও কবরস্থান পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।