ছবি: সংগৃহীত।
হাওরাঞ্চলের কৃষিজমি রক্ষায় মাঠে নেমেছেন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পূবের হাওরে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে জেলা শহরের আদালত সড়কে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সোলার প্যানেল স্থাপন হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের সামিল। তারা পূবের হাওরের অবশিষ্ট অংশ রক্ষার দাবি জানান।
আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া এলাকার কৃষক-মৎস্যজীবীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই আন্দোলনে সহযোগিতা করে ‘হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার’।
কৃষকেরা বলেন, ‘পূবের হাওর তাদের জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই হাওরের ধান না পেলে তারা খাদ্যসংকটে পড়বেন। একই সঙ্গে গরু-ছাগল চরানোসহ অন্যান্য জীবিকাও বন্ধ হয়ে যাবে।’

তারা আরও অভিযোগ করেন, হাওর রক্ষার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
শহরের আদালত সড়কের পুরাতন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষকনেতা আব্দুল সোবাহান, পরিচালনা করেন হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মো. শাহিন ইকবাল।
বক্তব্য দেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কিম, অধ্যাপক সেলিমুজ্জামান, হাওর রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক আ স ম ছালেহ সোহেল, সদস্য সচিব এম খছরু চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা আহমদ বেলাল, নির্বাহী সদস্য শামসুদ্দিন মাস্টার, আলমগীর হোসেন, খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি নেতা এহসান জাকারিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সমাবেশ শেষে এক প্রেসনোটে জানানো হয়, সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবালা ইউনিয়নের তিন গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার কৃষক-মৎস্যজীবীর জীবিকা নির্ভর পূবের হাওরের ১০০ একর কৃষিজমি শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘Moulvibazar Solar PV Park’ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষিজ জমির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, কোম্পানিটি স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছিল যে প্রকল্পে ধান বা মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, কিন্তু এখন তা মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে।
তারা আশঙ্কা করেন, পূবের হাওরের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ জায়গায় ২৫ মেগাওয়াট নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যা হাওরের পুরো পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে দেবে।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নেওয়া রাবার ড্যাম প্রকল্পের মাধ্যমে যে জমিতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হয়েছিল, সেই একই এলাকায় এখন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে- এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আথানগিরি গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সুস্বাদু মাছের জন্য প্রসিদ্ধ এই বড় হাওর এখন সংকটে পড়েছে।’
গ্রামের মুরুব্বি আবদুস সোবহান ছুফাই বলেন, ‘চোখের সামনে হাওর বদলে যাচ্ছে। কোম্পানি এসে প্রকল্প করে ফেলছে, মানুষ ঘর তুলছে।’
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা বলেন, ‘মৌলভীবাজারের হাওরগুলো দেশের ধান ও মাছের গুরুত্বপূর্ণ উৎসস্থল। কৃষিজমি ও জলাশয় নষ্ট করে শিল্প ও জ্বালানি প্রকল্প স্থাপন জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
এর আগে ১২ অক্টোবর পূবের হাওরে একই দাবিতে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন।
প্রেসনোটে বলা হয়, ‘আমরা মৌলভীবাজারবাসীর সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানাই- কৃষি, কৃষক ও হাওর-পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলনে পাশে দাঁড়ান। পূবের হাওরের বাকি অংশ রক্ষা করতেই এখন আমাদের লড়াই।’