ছবি- সংগ্রহ
সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের ৩৪ জন বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার বিকেল পৌনে ৩টা থেকে পৌনে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ঘিরে উত্তেজনা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
বৈঠক শুরুর আগে মহাসচিবের ব্যক্তিগত সহকারী সুনামগঞ্জের ১১ নেতাকে সভাকক্ষে ডেকে নেন। এতে বাকিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে হৈচৈ শুরু করেন। প্রবেশে বাধা পেয়ে কয়েকজন নেতার সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও বাগবিতণ্ডা হয়। সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে কার্যালয়ের কর্মচারী সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক জাহিদ হোসেন লাঞ্ছিত হন এবং তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
ঘটনাস্থলে ক্ষুব্ধ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেন, ত্যাগী ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে প্রভাবশালী কিছু নেতা নিজেদের ঘনিষ্ঠদের প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা অভিযোগ তোলেন, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী ও কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন প্রত্যেক আসনে মনোনয়ন “ভাগবাটোয়ারা” করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাদের দাবি, গত বছর ৫ আগস্টের পর যারা বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন, এবার তাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সভা শুরুর আগে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাদীর আহমদ, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, এম এ কাহার, এম এ সাত্তার এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনের আবুল মুনসুর শওকত, ব্যারিস্টার আবিদুর রহমান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মাহবুবুর রহমান ও মোতালেব খানসহ প্রায় ১৫ জন নেতা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান। তারা অভিযোগ করেন, জেলা ও বিভাগের তিন দায়িত্বশীল নেতা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বাইরে রেখেছেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাদীর আহমদ বলেন, “সুনামগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক, স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দলের ত্যাগী নেতাদের অবজ্ঞা করেছেন। কিন্তু মহাসচিব আমাদের জানিয়েছেন, তালিকা সংক্ষিপ্ত করার জন্য তিনি কাউকে দায়িত্ব দেননি। বরং মাঠে কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কোথাও কাউকে একক প্রার্থী হিসেবে ডাকা হয়নি।”
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য আবদুল হক বলেন, “আমাদের দোষারোপ করা অনুচিত। আমরা শুধু কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসরণ করেছি।”
বিকেল সোয়া ৩টায় বৈঠক শুরু হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর উদ্দেশে দলীয় নির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আপনারা যারা এসেছেন, প্রতি আসনে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। সংসদ সদস্য পদ ছাড়াও আপনাদের দায়িত্ব দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আছে। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদেরও দলীয় কাজে রাখা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সভা থেকে ফিরে আপনারা ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। কেউ কারও সমালোচনা করবেন না। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করবেন।”
এরপর মহাসচিব প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর বক্তব্য শোনেন এবং বৈঠক শেষ করেন। তবে সভাকক্ষের বাইরে থেকে যাঁরা সাক্ষাতের সুযোগ পাননি, তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তারা দাবি করেন, যদি এমন বাছাই করা বৈঠক হয়, তবে ত্যাগী নেতারা বারবার বঞ্চিত হবেন এবং দলীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গুলশানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয়ের সামনে উত্তেজনা বিরাজ করে।