ছবি: সংগৃহীত।
হিন্দি সিনেমায় প্রেমের গল্পের অভাব নেই, তবে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ (ডিডিএলজে) যেভাবে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, তা একেবারেই অনন্য। ১৯৯৫ সালের আজকের দিনেই মুক্তি পায় আদিত্য চোপড়ার এই কালজয়ী ছবি। ত্রিশ বছর পরেও রাজ ও সিমরানের প্রেম আজও বলিউডের রোমান্সের প্রতীক।
গল্পের শুরু: রাজ ও সিমরানের প্রেমযাত্রা
লন্ডনের উপকণ্ঠে ঐতিহ্যবাহী পরিবারে বেড়ে ওঠা সিমরান (কাজল) স্বপ্ন দেখে নিজের মতো করে বাঁচার। তাঁর বাবা বলদেব সিং (অমরেশ পুরী) কঠোর ও রক্ষণশীল; মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন বন্ধু অজিতের ছেলে কুলজিতের (পারমিত শেঠি) সঙ্গে। তবে সিমরান যখন ইউরোপ সফরে বের হয়, লন্ডন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে দেখা হয় রাজের (শাহরুখ খান) সঙ্গে।
প্রথমে মনোমালিন্য, পরে বন্ধুত্ব, আর শেষে গভীর প্রেম। কিন্তু বাধা আসে পারিবারিক ঐতিহ্য ও বাবার নিয়ন্ত্রণে। এরপর শুরু হয় রাজের সংগ্রাম-প্রেম জিততে হলে পরিবারকেও জিততে হবে।
তিন দশক পরেও সিনেমাটি বলিউডে এক ‘কালচারাল আইকন’। রাজ-সিমরানের প্রেম শুধু প্রজন্মের সীমা পেরোয়নি, বরং ভারতীয় সমাজে প্রথাগত পরিবারে প্রেমের নতুন ভাষা এনেছিল।
অমরেশ পুরীর বলদেব চরিত্রটি হয়ে উঠেছিল ‘নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার’ প্রতীক-মেয়ে আধুনিক হতে পারে, কিন্তু প্রেম বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা নয়। এই দ্বন্দ্ব আজও অনেক সিনেমায় প্রতিফলিত হয়-যেমন ‘টু স্টেটস’ বা ‘কবীর সিং’-এ দেখা যায় একই সামাজিক টানাপোড়েন।
শুটিংয়ের স্মৃতিতে কাজল
তিন দশক পরও শুটিংয়ের স্মৃতি টাটকা কাজলের কাছে। তিনি বলেন, “ওটা ছিল জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়। সুইজারল্যান্ডে শুটিং, হাসি-মজা, বন্ধুদের সঙ্গে সময়—সব মিলিয়ে মনে হয়েছিল এক লম্বা ছুটি কাটাচ্ছি।”
কাজল মজার ছলে যোগ করেন, “একবার ভুল করে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়েছিলাম! কিন্তু এমনই পাগলাটে অভিজ্ঞতাগুলোই আজও মনে আনন্দ জাগায়।”
গানের জাদু: যতিন-ললিতের অমর সৃষ্টি
সিনেমার প্রতিটি গানই হয়ে উঠেছিল কিংবদন্তি-‘তুঝছে দেখা তো’, ‘মেহেন্দি লাগা কে রাখনা’, ‘মেরে খোয়াবো মে’, ‘যারা সে ঝুম লু ম্যায়’-সবই এখনো সমান জনপ্রিয়।
যতিন-ললিতের সুরে কণ্ঠ দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, অভিজিৎসহ অনেকে। ললিত বলেন, ‘আমরা ভাবিনি এই গানগুলো ৩০ বছর পরও বাজবে। কিন্তু এটাই ডিডিএলজের ম্যাজিক।’
পর্দার পেছনের লড়াই
কুলজিত চরিত্রে পারমিত শেঠিকে আজও দর্শক মনে রেখেছে। কিন্তু চরিত্রটি পেতে তাঁকে লড়তে হয়েছে। পারমিত জানান, ‘প্রথমে আমাকে বাদ দেওয়া হয়, কিন্তু আমি আবার অডিশন দিই, কিছু সংলাপ নিজে বদলাই-শেষে আদিত্য বলেন, ‘তুমিই আমার কুলজিত।’
সাফল্যের ইতিহাস
মাত্র ৪ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত এই সিনেমা আয় করে ১০৪ কোটি রুপি-সেই সময়ের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসাসফল ছবি। এটি জিতে নেয় জাতীয় পুরস্কারসহ ১০টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, যার মধ্যে সেরা অভিনেতা (শাহরুখ খান), সেরা অভিনেত্রী (কাজল) ও সেরা পরিচালক (আদিত্য চোপড়া) অন্তর্ভুক্ত।
এক রেকর্ডের ইতিহাস
মুক্তির পর টানা ১০০৯ সপ্তাহ ধরে চলেছিল মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির প্রেক্ষাগৃহে-যা বিশ্ব সিনেমায় এক রেকর্ড। করোনার আগে পর্যন্তও এটি নিয়মিত প্রদর্শিত হয়েছে।
আজও দর্শকের ভিড় কমে না। ৬০ বছর বয়সী এক দর্শক বলেন, ‘আমি ৩০ বার দেখেছি, আজও টিকিট কিনেছি।’
রিমেক নয়, ম্যাজিক একবারই
কাজল বলেন, ‘ডিডিএলজের মতো সিনেমা রিমেক করা উচিত নয়। ম্যাজিক একবারই ঘটে, বারবার নয়।’
তিন দশকের ভালোবাসা
‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ শুধু একটি সিনেমা নয়-এটি প্রেম, পরিবার, সংস্কৃতি ও সময়ের সীমানা ছাড়ানো এক অনুভূতির নাম।
যেভাবে রাজের ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে সিমরান দৌড়ে আসে-সেই দৃশ্য এখনো হৃদয়ে কাঁপন তোলে, আর প্রমাণ করে-সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প কখনো পুরোনো হয় না।