ছবি: সংগৃহীত।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটের রাজনীতিতে ছোট ও মধ্যমসারির দলগুলোর তৎপরতা অনেকটাই থমকে গেছে। ইসলামী ঘরানার প্রভাবশালী দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এখন জোটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে, তবে তারা স্পষ্ট করেছে-জামায়াত ছাড়া অন্য যে কোনো দলের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাম্প্রতিক সময়ে আবারও রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
জমিয়তের প্রস্তুতি
জমিয়তের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও এখনো দুই দলের মধ্যে পূর্ণ বোঝাপড়া হয়নি। তবুও জমিয়ত সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে।
প্রার্থীরা হলেন-
সিলেট-১ (সদর-মহানগর): মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী,
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর): হাফিজ হোসাইন আহমদ,
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ): মাওলানা নজরুল ইসলাম,
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ): অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী,
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ): মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক,
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার): শিল্পপতি হাফিজ ফখরুল ইসলাম।
জমিয়তের সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পর জামায়াতের কিছু কর্মকাণ্ডে তাদের জনসমর্থন কমেছে, বিপরীতে জমিয়তের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। ৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও জোট হলে সেটি পরিবর্তন হতে পারে। তবে কোনোভাবেই জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়।’
বিএনপি ও জমিয়তের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সিলেট-৫ আসনকে ঘিরে দুই দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
জাপার নীরবতা
দলীয় বিভাজনের পর সিলেটেও সাংগঠনিক দুর্বলতায় ভুগছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির (রওশন) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেলা আহ্বায়ক ইশরাকুল হোসেন শামীম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়ার মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। চাঁদাবাজি-রাহাজানি বন্ধ না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। পরিবেশ অনুকূল হলে জাপা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে।’
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (কাদের) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আহ্বায়ক শাব্বির আহমদ বলেন,‘সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ এখন একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের অপেক্ষায়। কিন্তু সরকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি, পারবেও না বলে মনে হয়। আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এনসিপির সাংগঠনিক ব্যস্ততা
প্রাথমিকভাবে সক্রিয় থাকলেও নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা নিস্ক্রিয় মনে হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটির নেতারা বলছেন, তারা সাংগঠনিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত।
এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এহতেশাম হক বলেন, ‘আমরা ক্ষমতামুখী নই। আমাদের কাছে জনগণ, সংগঠন, নির্বাচন-তারপর আসে ক্ষমতা। আমরা বসে নেই; এই সপ্তাহেই সিলেট বিভাগের চার জেলায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে ৯০০ আবেদন পেয়েছি।’
দলটির অন্যান্য নেতারাও জানান, এনসিপি এখন সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত করাতেই মনোযোগ দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা কোনো আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জমিয়তের মতো ইসলামী দলের জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত স্থানীয় ভোটের সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে জাপা ও এনসিপির নীরবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে-তারা এখনই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়, বরং সাংগঠনিক শক্তি পুনর্গঠনে ব্যস্ত।