ছবি: সংগৃহীত।
ডায়াবেটিস মেলিটাস, বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৫০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং আগামী কয়েক দশকে এই সংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ডায়াবেটিস কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না; এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, চোখের সমস্যা ও স্নায়ু ক্ষতিসহ নানা জটিলতার প্রধান কারণ। ফলে এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক স্তরে বড় অর্থসামাজিক চাপ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে। নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, স্থূলতা ও জেনেটিক প্রবণতা এর মূল কারণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যাস ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১০-১২ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার একটি বড় অংশ রোগটি সম্পর্কে অবগত নয়।
কফি ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ
সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি সেবন টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও অ-ক্যাফেইন উপাদান (যেমন ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, পলিফেনল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট) এই প্রভাব সৃষ্টি করে।
মূল প্রভাবগুলো:
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি: কফির ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মেটাবলিজম ও ফ্যাট বার্নিং: ক্যাফেইন মেটাবলিজম ও শক্তি ব্যয় বৃদ্ধি করে। স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ কমানো: কফির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ হ্রাস করে এবং কোষকে সুরক্ষা দেয়।
ঝুঁকি হ্রাস: আন্তর্জাতিক মেটা-অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পানকারীদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২০-২৫ শতাংশ কম, এমনকি ডিক্যাফ (ক্যাফেইনমুক্ত কফি) নিয়েও অনুরূপ সুবিধা পাওয়া গেছে।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত কফি (প্রতিদিন ৪-৫ কাপের বেশি) স্নায়বিক উত্তেজনা, অনিদ্রা, রক্তচাপ বৃদ্ধি ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়াতে পারে। চিনি, দুধ বা ক্রিম মেশালে ক্যালরি ও চর্বি বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ব্ল্যাক কফি সর্বোত্তম।
পরিমিত মাত্রায় (প্রতিদিন ২-৩ কাপ, চিনি ও ক্রিম ছাড়া) কফি সেবন টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, মেটাবলিজম উন্নতি ও প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করে। তবে কফি কেবল সহায়ক; মূল প্রতিরোধমূলক কৌশল হলো সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।