ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নামই যেন একেকটি গল্প। শুনতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এর পেছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে-ঘূর্ণিঝড়ের নাম কে রাখে, কীভাবে নামকরণ হয়, আর কেন বেশিরভাগ সময় নারীর নামেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়?
নামকরণ শুরু হয়েছিল কবে?
১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার প্রথমবারের মতো আটলান্টিক অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। পরে জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিকাল অর্গানাইজেশন (WMO) একটি বৈঠক ডেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রস্তুত করে।
২০০০ সালে WMO ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ESCAP) সদস্য দেশগুলোর (যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ওমান, মালদ্বীপ ইত্যাদি) পরামর্শে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই প্যানেলে ১৩টি দেশ যুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে আছে শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও।
নারীর নামে কেন ঘূর্ণিঝড়?
১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম মেয়েদের নামে রাখার প্রচলন শুরু হয়। যেমন-ক্যাটরিনা, নার্গিস, স্যান্ডি, রেশমি, বিজলি, নিশা, তিতলি, হেলেন-এসব ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিশ্চয়ই পরিচিত!
সেই সময় আবহাওয়াবিদদের ধারণা ছিল, মেয়েদের নাম ছোট ও সহজ হওয়ায় তা মনে রাখা সহজ। ফলে সতর্কতা প্রচার ও সংবাদ পরিবেশনে সুবিধা হয়। এই কারণেই বহু বছর ধরে শুধু নারীর নামেই ঝড়ের নামকরণ করা হতো।
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন সেনা ও আবহাওয়াবিদরা নারী নামের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়মিত করেন। বছরের প্রথম ঝড়ের নাম ‘A’ দিয়ে, পরেরটি ‘B’ দিয়ে-এভাবে ক্রমানুসারে নাম দেওয়া হতো।
তবে সময়ের সঙ্গে এই প্রথা বদলাতে শুরু করে। ১৯ শতকের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়াবিদরা পুরুষদের নামেও ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখতে শুরু করেন-বিশেষত অপছন্দের রাজনৈতিক নেতাদের নামে!
কে দেয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম?
যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, সেই অঞ্চলের দেশগুলোই নাম দেয়। বর্তমানে বিশ্বের ১১টি সংস্থা ঝড়ের নামকরণের দায়িত্বে। ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করে RSMC (Regional Specialized Meteorological Centre), যা ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ওমান, মায়ানমারসহ সদস্য দেশগুলো প্রতি বছর প্রস্তাবিত নামের তালিকা দেয়। এরপর ক্রমানুসারে সেখান থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নেওয়া হয়।
কতটি নাম ব্যবহার করা হয়?
প্রথমে ৮টি দেশ ৬৪টি নাম অনুমোদন করত। বর্তমানে ১৩টি দেশ মিলে প্রতিটি দেশ থেকে ১৩টি করে নাম প্রস্তাব করে-অর্থাৎ মোট ১৬৯টি নাম। ক্রমানুসারে ঘূর্ণিঝড় হলে সংশ্লিষ্ট দেশের তালিকা থেকে নাম নেওয়া হয়।
যেমন-আম্ফান’ ছিল থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম, এরপর বাংলাদেশের পালা ছিল-যেখান থেকে এসেছে ‘নিসর্গ’।
কেন নামকরণ জরুরি?
ঘূর্ণিঝড়ের বৈজ্ঞানিক নাম সাধারণ মানুষের পক্ষে মনে রাখা বা উচ্চারণ করা কঠিন। তাই সহজ ও সংক্ষিপ্ত নাম ব্যবহার করা হয়, যাতে সংবাদমাধ্যম, প্রশাসন ও জনগণ সহজেই ঝড় সংক্রান্ত তথ্য ও সতর্কতা বুঝতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের পার্থক্য
যখন বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার অতিক্রম করে, তখন তাকে ট্রপিকাল স্টর্ম বলা হয়। আর গতি ১১৯ কিলোমিটারের বেশি হলে সেটিই হয় ট্রপিকাল সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়।