প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:১০ (মঙ্গলবার)
ভারতের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ বাংলাদেশে বৃষ্টি হবে

ছবি: সংগৃহীত।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কাকিনাডার কাছাকাছি মাছিলিপটনম ও কালিংপটনমের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বর্তমানে ‘মন্থা’ অবস্থান করছে চেন্নাই থেকে প্রায় ৪২০ কিলোমিটার, বিশাখাপত্তনম থেকে ৫০০ কিলোমিটার, এবং কাকিনাডা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে।

প্রায় ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আঘাত হানার সময় এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিন রাজ্যে বড় ক্ষতির আশঙ্কা

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এম. মোহাপাত্রা এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্ধ্রপ্রদেশ, এরপর ওড়িশা ও ছত্তিশগড়। আগামী ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও তামিলনাড়ুতে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও জানান, অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ওড়িশার দিকে অগ্রসর হবে।

প্রস্তুত প্রশাসন, জারি উচ্চ সতর্কতা

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। সরকার উচ্চ সতর্কতা (হাই অ্যালার্ট) ঘোষণা করেছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ২২টি দল মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচ রাজ্যে-

অন্ধ্রপ্রদেশ,ওড়িশা,পুদুচেরি,তামিলনাড়ু, এবং ছত্তিশগড়ে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অন্ধ্রপ্রদেশের ১,৪১৯টি গ্রাম ও ৪৪টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

সমুদ্র উত্তাল, জারি নিষেধাজ্ঞা

‘মন্থা’র প্রভাবে সমুদ্র এখন উত্তাল। উচ্চ জলোচ্ছ্বাস ও ঢেউয়ের আশঙ্কায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সব সৈকত পর্যটকদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের উপকূলে কখন এবং কতটা বৃষ্টি হতে পারে

এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলে কখন এবং কতটা বৃষ্টি হতে পারে, সে সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। আজ আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৯০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ  বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে, তা বোঝা যাবে যখন এটি স্থলভাগে উঠে আসবে। প্রভাব বলতে বৃষ্টির কথাই বলছি। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখা যায়, আজ এর প্রভাবে দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন নেই। বাংলাদেশের উপকূলে এবং অন্যান্য অঞ্চলে আগামীকাল বুধবার সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

বজলুর রশীদ বলেন, পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাবে উঠে আসার পর। তারপরই এর গতিপ্রকৃতি বোঝা যাবে।এবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। এর অর্থ সুগন্ধি ফুল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যায় অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে দুর্বল হবে, তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারি বর্ষণ ও ঝোড়ো বাতাস অব্যাহত থাকতে পারে।