ছবি: সংগৃহীত।
নয় মাস পর আগামী ১ নভেম্বর থেকে আবারও পর্যটক যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটি ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। তবে পর্যটকদের অবশ্যই মানতে হবে সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা।
নির্দেশনায় পরিবেশ সুরক্ষাই অগ্রাধিকার
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বরে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করা যাবে, রাতযাপন নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটকদের রাতযাপনের অনুমতি থাকবে। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
বিআইডব্লিউটিএ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
পর্যটকদের অবশ্যই অনলাইনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কিনতে হবে।
প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে।
কিউআর কোডবিহীন টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে।
সৈকতে রাতের আলো, উচ্চশব্দ, বারবিকিউ পার্টি, মোটরচালিত যানবাহন (মোটরসাইকেল, সি-বাইক) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্রবাল, শামুক-ঝিনুক, কেয়া ফল, কাছিম বা অন্য কোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, স্ট্র, সাবান, শ্যাম্পুর ছোট প্যাক) বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
নতুন রুটে জাহাজ চলাচল
নিরাপত্তার কারণে এবার টেকনাফ নয়, কক্সবাজার শহর থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন পেলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
গত মৌসুমে তিন মাসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক দ্বীপটি ভ্রমণ করেছিলেন।
প্রকৃতি ফিরছে আপন সৌন্দর্যে
দীর্ঘ ৯ মাস পর্যটকবিহীন সময় পার করায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। সৈকতে লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, মা কাছিমের ডিম পাড়া ও প্রবাল-শৈবালের বিস্তার বেড়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সীমিত পর্যটন উদ্যোগ দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে। দ্বীপে বর্তমানে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, পাখি, মাছ ও স্তন্যপায়ীসহ প্রায় ১,০৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে।
দ্বীপবাসীর জীবিকার সংকট
অন্যদিকে, পর্যটক না থাকায় দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। দোকান, হোটেল ও রিসোর্ট মালিকেরা জানিয়েছেন, মৌসুমে রাতযাপনের সুযোগ সীমিত থাকায় তাঁদের ব্যবসায় বড় ধাক্কা লেগেছে।
সেন্ট মার্টিন দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আগে মৌসুমে পাঁচ মাস পর্যটকেরা থাকতেন। এখন সেই সুযোগ না থাকায় অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।’
হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি শিবলুল আযম কোরেশী বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার সরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয়, তবে স্থানীয় মানুষের জীবিকা রক্ষার দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।’
চলমান উন্নয়ন প্রকল্প
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানীয় জলের সংকট নিরসন, বেওয়ারিশ কুকুরের নিয়ন্ত্রণ, নতুন জেটি নির্মাণসহ শত কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
‘ডিসেম্বরের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের সংকট কিছুটা দূর হবে,’ জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন।