প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:৩৩ (মঙ্গলবার)
ছাতকে চাঁদাবাজি নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে আহত ১৫, গ্রেপ্তার ৬

ছবি: ইমজা নিউজ

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের গ্রামবাসীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে একাধিক দোকানপাটে। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে তাদের সুনামগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতী বাজার এলাকায় লুবিয়া ও বনগাঁও গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চোরাচালান ও এলসির চুনাপাথর পরিবহন ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লুবিয়া গ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিবুর রহমান মানিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামরুজ্জামান এবং বনগাঁও গ্রামের সাবেক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর অনুসারী খলিফা ফজল করিমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের জেরে রাতেই তা হাতাহাতি ও পরে দুই গ্রামের সংঘর্ষে রূপ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, রাতভর অন্তত তিন দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা, দা, কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে বনগাঁও গ্রামের মানিক মিয়া এবং লুবিয়া গ্রামের দিলোয়ার হোসেন ও মুক্তার হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

সংঘর্ষ চলাকালে ইছামতী বাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাজারের অন্তত পাঁচটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুট করা হয়। সংঘর্ষকারীরা বাজারের ব্রিজ এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং ডিজেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছিল, যা অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ রূপ নেয়।

খবর পেয়ে ছাতক থানা পুলিশ, বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো গ্রামজুড়ে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করেছে। বনগাঁও গ্রামের খলিফা ফজল করিম দাবি করেন, “লুবিয়া গ্রামের কামরুজ্জামানের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা বাজারে গিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।” অপরদিকে, কামরুজ্জামান বলেন, “বনগাঁও গ্রামের ফজল করিমের অনুসারীরাই আগে হামলা চালিয়েছে। আমাদের লোকজন আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা প্রতিরোধ করেছে।”

এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে বনগাঁও গ্রামের আহত মানিক মিয়ার স্ত্রী সাহিমা বেগম বাদী হয়ে ছাতক থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরও ১০–১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— ইসলামপুর ইউনিয়নের লুবিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান (৪০), রফিকুল ইসলামের ছেলে হযরত আলী (২৬), মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মাজদে মিয়া (২৫), সারপিনপাড়া গ্রামের জাহের মিয়ার ছেলে খুর্শেদ আলম (২৫), দোয়ারাবাজার উপজেলার লুবিয়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন সরকারের ছেলে আব্দুল হেকিম (৫৫) এবং হাবিবনগর গ্রামের লায়েক মিয়ার ছেলে রাসেল আহমদ (২১)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে এখনো টহল জারি রয়েছে এবং নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে উভয় গ্রামে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি ও পাথর ব্যবসা কেন্দ্রিক আধিপত্যের দ্বন্দ্ব চলছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা না থাকলে এমন সংঘর্ষ আরও বড় বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারতো বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ ঘটনার পর ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা দাবি করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন এবং সামাজিকভাবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “সংঘর্ষের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”