প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:৪২ (মঙ্গলবার)
কানাডা পাঠানোর ফাঁদ: নেপালে জিম্মিদশা থেকে সিলেটের তিন তরুণ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত।

নেপাল হয়ে কানাডা বা ইউরোপ পাঠানোর নামে ভয়াবহ মানবপাচারের ফাঁদ পেতেছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র। তারা বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের নেপালে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করছে এবং নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এভাবে প্রতারিত সিলেটের তিন তরুণকে উদ্ধার করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সিলেটের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তারা খবর পান যে, তার ভাইসহ তিনজনকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। প্রলোভন ছিল- ‘কানাডায় পৌঁছানোর পরই খরচ পরিশোধ করতে হবে।’ সেই অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর তিন তরুণকে নেপালে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর চক্রটি তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে।

পরবর্তীতে প্রতারকরা জিম্মিদের পাসপোর্টে ভুয়া কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে সেই ছবি পরিবারের কাছে পাঠায়। এরপর কানাডার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্যবহার করে নিজেদের ‘কানাডা পৌঁছে গেছে’ বলে দাবি করে পরিবারের কাছ থেকে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে আরও ১২ লাখ টাকা দিতে চাপ দিতে থাকে চক্রটি।

শরিফুল হাসান বলেন, ‘পরিবারের সন্দেহ হলে তারা স্থানীয় দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ঘটনার সত্যতা জানতে পারে। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে পরিবারগুলো ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২৬ অক্টোবর ব্র্যাকের মাধ্যমে সিআইডি ও নেপালের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়। সেদিন রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

গ্রেপ্তারের খবর নেপালের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছালে তারা ভয়ে ওই দিন রাত ৩টার দিকে কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরের পাশে তিন তরুণকে ছেড়ে দেয়। ৩০ অক্টোবর তারা ঢাকায় ফিরলে ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাদের সহায়তা করে। পরে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নেন।

ব্র্যাক জানায়, শুধু কানাডা নয়- ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে একইভাবে নেপালে নিয়ে গিয়ে তরুণদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনা বাড়ছে। নেপালে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায় বলেই পাচারকারীরা এই দেশকে বেছে নিচ্ছে।

সংস্থাটি বিদেশগামীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘বিদেশে বিপদে পড়লে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার ও পুনর্বাসনে কাজ করছি।’