প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:৩৯ (মঙ্গলবার)
পাঁচ জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে বিএনপির ৩০০ আসনে প্রার্থী চুড়ান্ত

ফাইল ছবি

পাঁচ দফা বহুমাত্রিক জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এই পাঁচ জরিপের মধ্যে রয়েছে ভোটারপ্রিয়তা, দলের জন্য ত্যাগ, রাজনৈতিক দক্ষতা, কর্মীবান্ধবতা ও ব্যক্তিগত চরিত্র। এই পাঁচ পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টদেরই দলের একক প্রার্থী হিসেবে শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। যদিও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক চলছে, তবুও দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্তের জন্য দলটি মোট পাঁচটি পৃথক জরিপ সম্পন্ন করেছে। এই জরিপগুলো সরাসরি তত্ত্বাবধান করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এবং সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে এই জরিপগুলো পরিচালনা করা হয়।

দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রথম জরিপে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি আসনে দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এসব প্রার্থীর জনসমর্থন যাচাইয়ের জন্য পৃথক জরিপ পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভোট পরিসংখ্যান, জনমত ও নির্বাচনী সম্ভাবনা নিয়েও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি জরিপের মধ্যে দুটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে, দুটি দলের সাংগঠনিক টিমের তত্ত্বাবধানে এবং একটি জরিপ সরাসরি বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সম্পন্ন হয়। সব জরিপের ফলাফল যাচাই ও বিশ্লেষণ শেষে দলীয় সিদ্ধান্তে সেগুলো ‘সিলগালা’ করে রাখা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখন তারেক রহমানের হাতে রয়েছে।

দলের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুব শিগগিরই ধাপে ধাপে এসব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রত্যেক আসনে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বার্তায় বলেছেন, “শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম দলের পক্ষ থেকে জানানো হবে। দল যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”

দলীয় সূত্রের দাবি, প্রার্থী বাছাইয়ে এবার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা নয়, সাংগঠনিক আনুগত্য, অতীত কর্মতৎপরতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে থেকে জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “দল এবার কোনো প্রকার মনোনয়ন বাণিজ্য বা প্রভাব খাটানোর সুযোগ রাখবে না। জনগণের গ্রহণযোগ্য প্রার্থীই হবে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী।”

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ইতোমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একদিকে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে দলগুলো মাঠপর্যায়ে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই গোছানো ও গোপন জরিপভিত্তিক প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া দলটির নির্বাচনী প্রস্তুতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন অপেক্ষা শুধু তারেক রহমানের হাত থেকে ঘোষিত হবে সেই চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা, যা নির্ধারণ করবে বিএনপির নির্বাচনী কৌশল ও মাঠের অবস্থান।

সুত্র: এনটিভি