প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ২০:০০ (বুধবার)
আন্দোলন করায় মালয়েশিয়ায় ১৯০ বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরিচ্যুত

ছবি: সংগৃহিত

মালয়েশিয়ায় আবারও আলোচনায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেডিসেরাম সম্প্রতি শোষণমূলক আচরণের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ায় ১৯০ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, শুধু চাকরি হারানোই নয়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভিসাও বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো যায়।

গেলো ৩১ অক্টোবর কুয়ালালামপুরভিত্তিক কোম্পানিটি একযোগে বাংলাদেশি কর্মীদের হাতে চাকরিচ্যুতির চিঠি তুলে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, আমরা শুনেছি, অন্তত দশজনের ভিসা ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

অন্য আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আইনজীবীর সহায়তায় শ্রম আদালত ও অভিবাসন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে চায়নি। মনে হলো, ন্যায়বিচার যেন প্রবাসীদের জন্য নিষিদ্ধ।’

জানা গেছে,  ২০২৩ সাল থেকে মেডিসেরামের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার পারিশ্রমিক ও নিয়োগ ফি ফেরতের দাবিতে বারবার আন্দোলন করে আসছেন। চলতি বছরের মে মাসে প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে পরিবর্তন আসেনি।

ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্ক, সোশালিস অল্টারনেটিভ এবং আংকাতান কেসুয়ান সিসওয়া সোশালিস।

তারা যৌথ বিবৃতিতে কোম্পানির এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অমানবিক’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মেডিসেরামের শ্রমিকরা বছরের পর বছর দাসসুলভ পরিবেশে কাজ করছেন- তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, বেতন দিতে দেরি করা হয়, ভিসা নবায়ন করা হয় না, আর নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হুমকি শুনতে হয়।

তাদের দাবি, মেডিসেরামের বিরুদ্ধে ২০১৭ সাল থেকেই একই ধরনের অভিযোগ চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশের  অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন এই প্রবাসী শ্রমিকরাই। অথচ মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৪.৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের বড় অংশই নিয়োগ ফি বাবদ ৪.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনায় জর্জরিত। অনেকেই বর্তমানে বেকার বা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়- মালয়েশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানে এখনো শ্রম অধিকার সুরক্ষা কার্যকর নয়। প্রবাসীদের কণ্ঠরোধ না করে, বরং তাদের ন্যায্য দাবি ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের এই আন্দোলন কেবল চাকরি রক্ষার নয়, এটি ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও মানুষের অধিকারের লড়াই।