প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২২:২২ (বৃহস্পতিবার)
সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করছেন আরিফুল হক চৌধুরী

ফাইল ছবি

শেষ পর্যন্ত সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে রাজি হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক দুইবারের মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।

আজ রাত ১০টা পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি ওই আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হন।

আরিফুল হক চৌধুরী ইমজা নিউজকে জানান, “চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বী। তাঁর নির্দেশে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হয়েছি। দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি।"

"আজকের সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি,” বলেন তিনি।

তিনি ৪ নভেম্বর কেন্দ্রের জরুরি তলবে ঢাকায় যান। সেখানে তাঁকে নিয়ে একাধিক দফায় বৈঠক হয়। সবশেষ আজ রাত ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসন তাঁকে ডেকে পাঠান এবং এ সিদ্ধান্ত দেন।
এর আগে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ব্যর্থ হন।

আরিফুল হক চৌধুরী ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায় বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মদ শফিকুল হক চৌধুরী এবং মাতা আমিনা বেগম। তিনি ছোটবেলা থেকেই সিলেট শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পারিবারিক প্রথা ও রাজনৈতিক পরিবেশ তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তোলে।

তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় স্থানীয় পর্যায়ে। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের একজন ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে উন্নয়ন কমিটির প্রধান হন। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তিনি যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। একই বছরের ১৯ জুন তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় এবং ৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে ২৬.৩ মিলিয়ন টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।

২০০৮ সালে চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শামা হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৫ মিলিয়ন টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়, যার ফলস্বরূপ তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি দুর্নীতির মামলায় খালাস পান।

২০১৩ সালের জুনে তিনি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে পরাজিত করে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। মেয়র হিসেবে তাঁর প্রশাসনিক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সাইফুর রহমান শিশু পার্ক ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রচেষ্টা।

২০১৪ সালে তাঁকে শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিভিন্ন আদেশের মাধ্যমে তিনি আবার দায়িত্বে ফিরে আসেন।

২০১৮ সালে চৌধুরী পুনর্নির্বাচনে জয়লাভ করেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে ৬,১৯৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

মেয়র হিসেবে তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নগরীর সড়ক ও জলবায়ু অবকাঠামো উন্নয়ন, পানির সরবরাহ ব্যবস্থা সংস্কার, এবং বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রকল্প বাস্তবায়ন। তিনি স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সিলেটের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের চেষ্টা চালান।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরিবারে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সক্রিয় সদস্য এবং দলের জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আজও আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে একজন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।