ছবি: সংগৃহিত।
সিলেট-৪ আসন (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) নিয়ে বিএনপির ভেতরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। দলটি যখন সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে মনোনয়ন ঘোষণা করে দুটি আসন খালি রাখল—এর মধ্যে একটি ছিল সিলেট-৪, তখন থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, কে হচ্ছেন এই সীমান্তবর্তী আসনের প্রার্থী?
দুদিন আগেও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি সিলেট-৪ আসনে, নির্বাচনে যাচ্ছেন না। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক প্রস্তাবও তিনি নাকচ করে দেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীও গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বলেন, আরিফুল ভাই বারবারই বলেছেন, তিনি সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হতে চান না।
কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয় বুধবার রাতে। ঢাকায় একাধিক বৈঠকের পর রাত সাড়ে দশটার দিকে নিজেই ইমজা নিউজকে ফোনে জানান, 'বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করছি।'
প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন? আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সিটি করপোরেশনের রাজনীতির পরিচিত মুখ। দু’দুবার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তার জনপ্রিয়তা নগরভিত্তিক ভোটে নিশ্চিত। কিন্তু সিলেট-৪ একটি সীমান্তঘেঁষা গ্রামীণ আসন, যেখানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে কৌশল থাকতে পারে। বিএনপি সিলেট সিটি রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাইছে। আরিফুল হক দীর্ঘদিন ধরে নগর বিএনপির একচ্ছত্র প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাকে সংসদ নির্বাচনে পাঠানো হলে শহর রাজনীতিতে নতুন মুখের উত্থানের সুযোগ তৈরি হবে, এমন ধারণা অনেকের।
সিলেট-৪ আসনে একসময় প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। যিনি এই আসন থেকে বিজয়ীও হন। সেই প্রেক্ষাপটে তার ‘ভাবশিষ্য’ আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া বিএনপির জন্য প্রতীকী বার্তা বহন করতে পারে। দলটি আবারও সাইফুর রহমানের উন্নয়নের উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে চায়।
আরিফুল হক চৌধুরী সবসময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাকে এমন এক আসনে দাঁড় করানো যেখানে জয়ের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কঠিন, সেটিকে অনেকেই দেখছেন নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা” হিসেবে। অর্থাৎ দলের কেন্দ্রীয় কৌশলকে বাস্তবায়ন করার জন্যই হয়তো তিনি শেষমেশ রাজি হয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তে সিলেট বিএনপির ভেতরে স্পষ্ট অস্বস্তি দেখা গেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা হেলাল উদ্দিন আহমদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হেকিম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। এই প্রার্থীরা মাঠে কর্মীসভা ও সমাবেশ করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে হঠাৎ করে ঢাকায় সিদ্ধান্ত বদলে যাওয়ায় ক্ষোভ দানা বাঁধবে-এটা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা কেবল একটি নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব পুনর্গঠন, আনুগত্য যাচাই ও রাজনৈতিক প্রতীকের সমন্বিত খেলা বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এই কৌশল সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে সীমান্তবর্তী এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি কতটা সক্রিয় করতে পারেন আরিফুল হক চৌধুরী তার ওপর।