মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে মর্যাদাপূর্ণ পিএইচডি স্কলার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন বাংলাদেশি প্রবাসী গবেষক বৃষ্টি খাতুন। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার গবেষণায় উৎকর্ষতা, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং টেকসই উন্নয়ন খাতে ধারাবাহিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা ও সার্টিফিকেট অব রিকগনিশন প্রদান করে।
অর্জনের অনুভূতি ব্যক্ত করে বৃষ্টি খাতুন বলেন, এই পুরস্কার শুধু একটি সম্মান নয়, এটি মাঠপর্যায়ের দীর্ঘ গবেষণা, অসংখ্য নির্ঘুম রাত এবং বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির (ফুড ওয়েস্ট ভ্যালোরাইজেশন) ওপর আমার নিরলস পরিশ্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
তিনি তার গবেষণা সুপারভাইজার প্রফেসর দাতো’ ড. আগামুথু পারিয়াতাম্বি-কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গবেষণার প্রতিটি ধাপে তাঁর দিকনির্দেশনা, বিশ্বাস ও সহায়তা আমাকে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েছে।
এছাড়া তিনি জেফরি স্যাক্স সেন্টার অন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট–এর পুরো টিমকে গবেষণাজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
আরেকজন অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত গবেষক জেসন সো চিউ কার–কে অভিনন্দন জানিয়ে বৃষ্টি বলেন,“একসঙ্গে এই অর্জন ভাগ করে নেওয়া আমার জন্য বিশেষ অনুপ্রেরণার। সহকর্মীদের আস্থা আমাকে আরও বড় পরিসরে সমাজে অবদান রাখতে উৎসাহ দেয়।”
তিনি জানান, এই সম্মান তাকে ভবিষ্যতে বৃত্তাকার বায়োইকোনমি, ওয়েস্ট-টু-রিসোর্স উদ্ভাবন, এবং টেকসই কৃষি উন্নয়ন গবেষণায় আরও দৃঢ়ভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
সিলেটের মেয়ে বৃষ্টি খাতুন মালয়েশিয়ার কৃষি ও টেকসই উন্নয়ন গবেষণায় ইতোমধ্যে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছেন। তার কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে নতুন পরিবর্তন এনেছে।
তার যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে, মালয়েশিয়ার কোতা দামানসারার সেগী ইউনিভার্সিটি–তে ডিপ্লোমা ইন হোটেল ম্যানেজমেন্ট অধ্যয়ন দিয়ে। রান্না, টেকসই খাদ্যব্যবস্থা এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে আগ্রহ তাকে পরবর্তীতে গবেষণার জগতে নিয়ে আসে।
কোভিড–১৯ সময়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট তাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়। সেই সময়ে তিনি “ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান ফ্যামিলি” শীর্ষক মানবিক প্রকল্প পরিচালনা করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৯টি দেশের প্রায় ৭৫ শ’ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং সাতটি দেশের শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন তিনি। মানবিক এই উদ্যোগই তাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস-ডি-জি-এস) নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়।
সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নকালে তিনি শুরু করেন খাদ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য থেকে টেকসই কৃষি ইনপুট উদ্ভাবন বিষয়ক গবেষণা। তার সুপারভাইজার প্রফেসর আগামুথু পারিয়াতাম্বি যিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীর একজন—তার তত্ত্বাবধানে বৃষ্টি পিএইচডি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।
তার গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো,এশিয়ান কৃষিতে খাদ্য বর্জ্য ব্যবহার করে টেকসই, সাশ্রয়ী এবং কার্বন-হ্রাসকারী ফার্টিলাইজার মডেল তৈরি করা।
বৃষ্টি খাতুন বলেন, আমার গবেষণার পথচলা এখনো চলমান। প্রতিটি ধাপে নতুন সম্ভাবনা, উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই।