প্রকাশিত : ০৭ জুলাই, ২০২৫ ১৮:৩২ (মঙ্গলবার)
মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

ছবি: সংবাদ সম্মেলনে কর্ম বিরতির ঘোষণা দিচ্ছেন পরিবহন নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলেটে সর্বস্তরের পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কর্মবিরতি ডাক দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ।পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবিসহ এবার ৬ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা।তবে এই ধর্মঘটে পরীক্ষার্থী বহনকারী গাড়ি ও জরুরী সেবায় নিয়োজিত পরিবহন আওতামুক্ত থাকবে।

সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রেবাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নেতৃবন্দ সোমবার বিকেলে নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে এই আন্দোলনের ডাক দেন।

তবে এই ধর্মঘট মালিক শ্রমিকদের কল্যাণে দেওয়া হয়নি বলে আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন  সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও জামায়াত নেতা মাওলানা লোকমান আহমদ। তিনি মঙ্গলবার নিজেদের গাড়ি রাস্তায় চলবে বলেও জানান।

জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ ৫ দফা দাবিতে গত শনিবার থেকে পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। ৪৮ ঘন্টার পর তারা জেলা প্রশাসকের অপসারণ থেকে সরে নতুন আরেকটি দাবি সংযুক্ত করে আর ২৪ ঘন্টা বাড়িয়ে মোট ৭২ ঘন্টার কর্ম বিরতি পালন করে। আশুরা ও বিএনপির কর্মসূচির কারণে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে কর্মসূচি পালিত হয়। এরমধ্যে দাবি না মানলে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতির হুমকি দেয় সংগঠনগুলো।

এরই মধ্যে সোমবার রাতে আন্দোলনের সাথে সমর্থন নেই বলে ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামীপন্থী পরিবহন মালিকেরা। এ সময় এ আন্দোলনকে মালিক-শ্রমিকের কল্যাণহীন দাবি করে জুলাই আন্দোলনের চেতনা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করা হয়।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও জামায়াত নেতা মাওলানা লোকমান আহমদ এ ঘোষণা দেন।

মাওলানা লোকমান আহমদ জানান, রবিবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনালে এক জরুরি বৈঠকে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা মঙ্গলবার থেকে তাদের গাড়ি রাস্তায় চলবে বলেও জানান। জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিকদের সরে যাওয়ার ঘোষণায় আন্দোলনে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়।

এই প্রেক্ষাপটে সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রেবাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনির্দিষ্টাকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা কতটুকু পালিত হবে তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই রয়েছে অনিশ্চয়তা।

যদি জামায়াতপন্থীদের পরিবহন রাস্তায় চলাচল শুরু করে, তবে অন্য ধর্মঘটকারীরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন, এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবন্দ বলেন, জেলা প্রশাসকের বিদ্বেষমূলক আচরন ও ব্যবসায়ী, মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তারা ৬ (ছয়) দফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

তারা বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমল থেকে অদ্যাবধি সিলেটের গণপরিবহন-পণ্য পরিবহন ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত। বৃহত্তর সিলেটের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী ও মালিক-শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম পাথর কোয়ারী। কিন্তু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে সিলেটের কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের সকল পাথর কোয়ারিসমূহ। ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ ও দুর্দশা। কর্মহীন হয়ে পড়েন বৃহত্তর সিলেটের প্রায় কোটি মানুষ। বর্তমানে রোজগারবঞ্চিত সিলেটের প্রান্তিক এ জনপদে বিরাজ করছে দুর্ভিক্ষাবস্থা।

তারা বলেন, অন্যদিকে রিজার্ভের ডলার অপচয় করে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। চিহ্নিত এ সিন্ডিকেট পাথর আমদানির নামে বিদেশে ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার শুরু করে। বিগত ৭ বছরে এই অপশক্তি সিন্ডিকেট পাথর আমদানির নামে আমাদের জাতীয় রিজার্ভের বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করতে সক্ষম হয়। নিজস্ব মজুদ থাকা সত্ত্বেও দেশবিরোধী অপশক্তির মদদে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির নামে অপচয় করা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার জন্য বার বার দাবি জানিয়ে আসলে ও আন্দোলন করলে ফ্যাসিষ্ট সরকার আন্দোলন দমাতে আমাদের উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন ও নানা ভাবে নির্যাতন চালায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ৫ আগস্টের পর থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত আমরা সেই জুলুম-নির্যাতন, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থেকে রেহাই পাননি। এমতাবস্থায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রেবাস, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথর সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৬ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি।

তারা ইতিমধ্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলেও জানান।

তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের উপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করা, সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করন বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতি পূরণ দেওয়া, সিলেটের পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা ও সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানী বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম ও সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলামসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।