
ছবি: সংগৃহিত।
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। প্যারিসের জনগণ যে দিন ভেঙে দিয়েছিল স্বৈরশাসনের প্রতীক বাস্তিল দুর্গ। বন্দিশালার গা-ছমছমে দেওয়াল ভেঙে সেদিন জনতার হাতে ফিরে এসেছিল ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার।
বাস্তিল দুর্গ শুধু একটি ভবনের নাম ছিল না, ছিল ভয়, নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক অন্যায়ের প্রতীক। আর তাই এর পতন ছিল একটি দর্শনের পতন, যেখানে রাজতন্ত্র নিজেকে জনগণের ঊর্ধ্বে ভাবত, সেখানে মানুষের গর্জনে ভেঙে পড়েছিল সেই অহংকারের প্রাচীর।
২৩৫ বছর পর সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছার পরও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাগে- বাস্তিল দুর্গের পতন আমাদের কী শিক্ষা দিয়েছে? আমরা কি আজও বাস্তিলের মতো কোনো দুর্গ নির্মাণ করছি না? আমাদের সমাজে কি গড়ে উঠছে না এমন এক ক্ষমতার দুর্গ- যেখানে মানুষের কণ্ঠরোধ হয়, বিনা বিচারে মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়, বিচার বিলম্বিত হয়, আর অসহায়েরা হারিয়ে যায় ব্যবস্থার গহ্বরে?
হ্যাঁ, আমরা আজও বাস্তিল দুর্গ তৈরি করছি। আমাদের এই ‘নির্মীয়মাণ দুর্গ’ হলো- বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দুর্নীতির রুদ্ধ চক্র, রাষ্ট্রীয় দমননীতি, ক্ষমতার স্বেচ্ছাচারিতা।
যে দেশে একজন মানুষ বিচার না পেয়েই বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আবদ্ধ অদৃশ্য কারাগারে কাটায়, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করলে রাষ্ট্র শত্রু ভাবে, যেখানে উন্নয়ন হয়, যেখানে অধিকারের কথা বললে রাষ্ট্রযন্ত্র ভাবে ষড়যন্ত্র, কিন্তু বহুল উচ্চারিত গণতন্ত্র চুপ করে থাকে- সেখানে নিঃসন্দেহে আমরা এক নতুন বাস্তিল দুর্গের ইট গেঁথে চলেছি।
বাস্তিলের পতনের মধ্য দিয়ে যেমন ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, তেমনি আজ আমাদেরও প্রয়োজন নতুন চেতনার, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করবে, প্রতিবাদ করবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে সচেতন থাকবে। কোনো সমাজই মুক্ত নয়, যদি তার মানুষের চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা অবরুদ্ধ থাকে।
বাস্তিল দুর্গ ভেঙেছিল মানুষ, অস্ত্র নয়, সাহস আর একতা দিয়ে মুক্তির উম্মাদনায়। আজ আমাদেরও প্রয়োজন সেই সাহস, বিবেক ও ঐক্যের। খুব প্রয়োজন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর।
বাস্তিল প্রতিদিন গড়ে ওঠে, মনে কিংবা কাঠামোয়- যতদিন না আমরা শিখি ভাঙতে।