প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২৫ ১৯:৫০ (রবিবার)
ত্রিপুরায় অবৈধ বাংলাদেশী শনাক্তে বিশেষ টাস্ক ফোর্স, উদ্বেগ বাংলাভাষীদের মধ্যেও

ছবি: সংগৃহিত।

বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে ত্রিপুরায় অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের শনাক্ত করে দেশে ফেরত পাঠাতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা গোয়েন্দা শাখার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট দেবাশিস সাহা। টাস্ক ফোর্সে জেলার প্রতিটি থানার ওসিরাও রয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এনই-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার কিরণ কুমারের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আগত অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে তাঁদের 'ডিপোর্ট' করা, অর্থাৎ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শনাক্ত ব্যক্তিদের বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি) সংগ্রহ করতে হবে। এসব তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি শনাক্তকরণ পোর্টালে আপলোড করতে হবে। পরে তাঁদের বিএসএফের মাধ্যমে সীমান্তে ফেরত পাঠানো হবে এবং টাস্ক ফোর্সকে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ভিত্তিতে পরিসংখ্যান নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

এই টাস্ক ফোর্স গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশেষ করে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে। কারণ এর আগে বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বৈধ শ্রমিকদেরও ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।

ওড়িশা, মহারাষ্ট্রসহ কিছু বিজেপিশাসিত রাজ্যে পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কড়া অবস্থান নিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপিকে দায়ী করেন তিনি। ওড়িশা সরকারকে চিঠি দিয়ে বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়নের অভিযোগও তোলেন।

মমতা অভিযোগ করেন, শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই অনেক শ্রমিককে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে হয়রানি করা হচ্ছে, যা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে ত্রিপুরা পুলিশের এই উদ্যোগ নতুন নয়, তবে এর অপব্যবহার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীরা সংখ্যালঘু, সেখানে ভাষাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের হয়রানি নতুন করে জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরার এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সচেতন মহলে উদ্বেগ ও বিতর্ক উভয়ই বাড়ছে।