প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫ ০১:৪২ (রবিবার)
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধ: এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সঙ্কট

ছবি: সংগৃহিত।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষে পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিয়েছে। থাই সরকারের তথ্যমতে, ইতোমধ্যেই এক লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে সংঘর্ষপূর্ণ অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ৩০০টির বেশি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ছেসংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনা সদস্য রয়েছেন।

সংঘর্ষের পটভূমি ও কারণ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের পর কিছুটা শান্তি বিরাজ করলেও, চলতি বছরের মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সামরিক অভিযান ও সংঘর্ষের পরিসর বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া হঠাৎ সংঘর্ষে যুদ্ধবিমান, কামান, ট্যাংক ও স্থলসেনা ব্যবহৃত হয়। থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ছয়টি এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে, যার মধ্যে দুটি প্রাচীন মন্দিরের আশপাশে সংঘর্ষ সবচেয়ে তীব্র হয়। কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী রকেট ও কামান দিয়ে থাইল্যান্ডের ভেতরে হামলা চালালে, থাই বাহিনী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ান সামরিক স্থাপনাগুলোতে পাল্টা হামলা চালায়।

উভয় দেশই সংঘর্ষের শুরু নিয়ে একে অপরকে দায়ী করেছে। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, কম্বোডিয়ার হামলায় একটি হাসপাতাল ও একটি পেট্রোলপাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া বলছে, থাই সেনারা সীমান্ত লঙ্ঘন করে তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। মানবিক সংকট ও উদ্বাস্তু পরিস্থিতি সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে পালানো মানুষদের অনেককে শিশু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মালপত্র নিয়ে গাড়িতে করে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে দেখা গেছে। কম্বোডিয়ার সামরোং শহরে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ভোরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে এবং সেনাদের রকেট লাঞ্চার নিয়ে সীমান্তের দিকে দৌড়ে যেতে দেখা গেছে।

কূটনৈতিক টানাপোড়েন সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা আগে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। এর জবাবে, কম্বোডিয়া থাই কূটনীতিকদের দেশত্যাগে বাধ্য করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক 'সর্বনিম্ন পর্যায়ে' নামিয়ে আনে। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও জাতিসংঘের উদ্যোগ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স সংঘর্ষ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংঘর্ষ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার এই সীমান্ত সংঘর্ষ দুই দেশের সাধারণ নাগরিকদের জীবনে চরম অস্থিরতা ডেকে এনেছে। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন এই বিরোধ দ্রুত সমাধান হয় এবং বৃহৎ মানবিক সংকট এড়ানো যায়। যুদ্ধবিরতি, কূটনৈতিক সংলাপ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দুদেশ আবারও স্থিতিশীলতার পথে ফিরতে পারে, এই প্রত্যাশাই এখন সবার।