
ছবি: সংগৃহিত।
ঝালকাঠির রাজাপুরে র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন (৫৫)-কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষ। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে জুমার নামাজের পর উপজেলার সাতুরিয়া ইঁদুরবাড়ি গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। বিকেলে রাজাপুর থানায় তোফাজ্জেল হোসেন চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি জানান, প্রতিবেশী মো. ইব্রাহীম হাওলাদার ও আবদুল হাইয়ের সঙ্গে তাদের পূর্ব বিরোধ ছিল। জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরপরই তারা দুজন আরও দুজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে ঘিরে ফেলেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা একটি অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেন।
তোফাজ্জেল হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি অভিযোগ তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে, অভিযুক্তরা বেধড়ক মারধর করে তাকে গুরুতর আহত করেন। হামলার পর তিনি নিজেই থানায় অভিযোগ করেন এবং ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেন।
লিমন হোসেন বলেন, আমি এ হামলার বিচার চাই। এটি স্পষ্টভাবে আমার পরিবারের ওপর পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ।' তিনি অভিযোগ করেন, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা একটি অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করা, যাতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ৯ জনের নাম রয়েছে।
অভিযুক্ত মো. ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের মধ্যে শুধু জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। লিমন প্রভাব খাটিয়ে আমাদের হয়রানি করছে।'
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।'
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ইব্রাহীম হাওলাদার ও আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে একদল লোক তোফাজ্জেল হোসেনকে মারধর করে। এ ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার রায়ে ইব্রাহীম হাওলাদারকে দুই বছর এবং আবদুল হাইকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে একমাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে ইব্রাহিম হাওলাদার নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন, বলেও অভিযোগ উঠে। ২০১১ সালের ২৩ মার্চ, রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়ায় নিজ বাড়ির পাশে র্যাবের গুলিতে পা হারান লিমন হোসেন। তিনি বাড়ির পাশ থেকে গরু আনতে গেলে, র্যাব সদস্যরা তাকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন বলে অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। ঘটনার পর র্যাব লিমনসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে এবং ওই মামলায় ইব্রাহিম হাওলাদার ছিলেন র্যাবের পক্ষে ১ নম্বর সাক্ষী। এই সম্পর্কেই বর্তমান হামলার সাথে তার সম্পৃক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।