প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫ ২১:৪৯ (রবিবার)
লুটপাটে হুমকির মুখে ধলাই সেতু, রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

সিলেটের বালু ও পথের মানে কাঁচা টাকা। এ কাঁচা টাকা পকেটস্থ করতে বরাবরই মশগুল রথি-মহারথি ও কর্তাব্যক্তিরা। পরিবেশ সচেতনরা বরাবরই পাথর ও বালুতে রামরাজত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার। কিন্তু কার কথা কে শুনে। আইওয়াশ আভিযান, পরদিন থেকে আগেরমতো সবকিছু স্বাভাবিক। ধরা'র মানববন্ধনে ক্ষুব্দ সুধিজনরা এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রতিটি সরকারের আমলেই বালু-পাথরে চলে দুর্বৃত্তায়ন। সরকার বদলায়, দখলদার বদলায় কিন্তু বদলায়না পরিবেশ ধ্বংসের এ প্রক্রিয়া।

ধলাই নদীর সেতুর নিচে গড়ে ওঠা বালু ও পাথর লুটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। 'ধরিত্রী রক্ষায় আমরা' ও 'সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার'-এর যৌথ উদ্যোগে শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ধলাই সেতুর পূর্বপ্রান্তে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নদীতীরবর্তী এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, গত এক বছরে ধলাই সেতুর আশপাশ থেকে ‘বালু ও পাথর আহরণ’-এর নামে ভয়াবহ পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের অংশ সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার-এর পক্ষে আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, 'আইনের কোনো তোয়াক্কা নেই। নিজের পায়ে কুড়াল মেরে ধলাই সেতু ধসানোর আয়োজন চলছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে প্রশাসনকে দায়ী করে মামলা করা হবে।'

২০০৫ সালে নির্মিত ধলাই সেতু কোম্পানীগঞ্জের সঙ্গে ভারত সীমান্তঘেঁষা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। পর্যটনগামীদেরও ভরসা এই সেতু। অথচ ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে প্রশাসনের নীরবতা ও শিথিলতায় ধলাই নদীর বুকে চলে আসছে অবাধে বালু-পাথর উত্তোলন। সেতুর নিচ থেকেও বালু তুলছে বালুখেকোরা, যা সেতুর অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

বক্তারা জানান, গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তাই ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ পরিবেশ সংগঠন জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিলেও থামেনি এই লুটতরাজ।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ধলাই সেতু যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো অঞ্চল।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় শিক্ষক নিজাম উদ্দিন মাস্টার।

বক্তব্য রাখেন ধরার সংগঠক ও ধলাইতীরের বাসিন্দা ফয়জুর রহমান, আইনজীবী অরুপ শ্যাম বাপ্পী, নাট্যকর্মী আহমেদ হোসেন চৌধুরী।

সভাপতির বক্তব্যে ড. এমদাদুল হক স্পষ্ট করেন, এই বালু লুট বন্ধে প্রয়োগ করা যেতে পারে একাধিক প্রচলিত আইন-বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আইন, এমনকি ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনও।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসন যদি আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হয়, তবে জনগণ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় অনেক সামাজিক সংগঠন, যারা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে সেতু রক্ষায় সোচ্চার হন।

শেষবারের মতো স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করে জানানো হয়, এখনো সময় আছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের আগেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।