প্রকাশিত : ২৭ জুলাই, ২০২৫ ১৩:০০ (রবিবার)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা রিয়াদসহ পাঁচজন আটক, সংগঠন থেকে বহিষ্কার

ছবি: সংগৃহিত।

ঢাকার গুলশানে সাবেক এমপির বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর ঢাকা মহানগরের সিনিয়র সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলায়মান রিয়াদসহ পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই সংগঠনের পক্ষ থেকে রিয়াদকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে গুলশান ২ নম্বরের ৮৩ নম্বর রোডে অবস্থিত সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা নিতে গেলে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি দল কয়েকদিন আগে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে এবং তখন ১০ লাখ টাকাও নেয়। শনিবার তারা বাকি টাকা চাইতে গেলে শাম্মীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

পুলিশ জানায়, রিয়াদ নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর যুগ্ম আহ্বায়ক ও ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)’ এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পরপরই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে রিয়াদকে ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক পদসহ সকল সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অভিযুক্ত রিয়াদের সঙ্গে সংগঠনের আর কোনো সম্পর্ক নেই এবং ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধে জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আটক ছাত্রনেতাদের শেকড় অনেক গভীরে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে আটক পাঁচজনের একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে এ মন্তব্য করেন উমামা ফাতেমা।

 

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্চার্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে, আমার মনে হচ্ছে আমিই সব থেকে কম আশ্চর্য হয়েছি। এই ছেলেগুলোকে তো নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন ধরে। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল।’

তিনি বলেন,‘ছবির রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ণ টাওয়ারে আমার সামনে অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের ওপর পাল্টা চড়াও হয়। ওই ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এ ধরনের মানুষজনের আনাগোনাই সর্বত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ণ টাওয়ারে অবাধে আসা-যাওয়া করত। কারও দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে পিনড্রপ সাইলেন্স উপহার পেতে হবে। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম এসব লোকজনই কীভাবে দিনেশেষে এক্সেস করে নেয়। আজ এত মাস পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে বলার ভাষা পাই না কোনো? যে যেভাবে পারছে এই প্ল্যাটফর্মকে নষ্ট করেছে।’

সবশেষ তিনি লেখেন, ‘আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে : ইশ! মানুষ কত নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কীভাবে চাঁদাবাজি করল?! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।’

অন্যদিকে চাঁদাবাজি করার সময় আটক  আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান।
এ ঘটনায় মাহিন সরকারের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‌‌‌'আবদুর রাজ্জাক নামের যে ছেলেটা গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে, সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। অর্থাৎ গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে, তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই কেউ অর্থ উপার্জন করতে পারে বলে মনে করি। এখানে তার মতো ব্যক্তিকে কীভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল, এটা সামনে আনা প্রয়োজন। এটা খুব করে চাওয়া আমার।'