প্রকাশিত : ২৭ জুলাই, ২০২৫ ১৬:৫২ (রবিবার)
চাঁদাবাজ রিয়াদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

রাজধানীর গুলশানে সাবেক এক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রিয়াদ নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি এবং সরকারি কমিশনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে দাপটের সঙ্গে চলছিলেন। তার সঙ্গে আরও চারজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রিয়াদ পরিচিত ছিলেন বিভিন্ন ছায়া ছাত্র সংগঠনের নেতা হিসেবে। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)-এর কেন্দ্রীয় নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে আসছিলেন তিনি।

ঘটনার পরপরই গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন তার ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। এইভাবে প্রায় সব মন্ত্রণালয়েই ছাত্র প্রতিনিধি নামধারী একটি চক্র রয়েছে যারা সরকারি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, মামলাবাজি থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার স্মার্ট চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। নির্বাচন হলে তাদের এসব অবৈধ আয় বন্ধ হয়ে যাবে বলেই তারা নির্বাচন চায় না।"

এ ঘটনার পর গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে রিয়াদকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাগছাস থেকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকেও বহিষ্কার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকেও আরও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রিয়াদের সঙ্গে আটক অন্য চারজন হলেন সাকাদাউন সিয়াম (২২), সাদমান সারদার সাদাব (২১), ইব্রাহিম হোসেন মুন্না (২৪) এবং আমিনুল ইসলাম (১৩)।

ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর মন্তব্য করেছেন, "এই রিয়াদের রাজনৈতিক অভিভাবক নাহিদ ইসলাম। তারাই এইসব চাঁদাবাজদের ছাত্র প্রতিনিধি বানিয়ে দেশে লুটপাট ও নীরব চাঁদাবাজির সুযোগ করে দিচ্ছেন।"

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে এতবড় চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় বিস্মিত রাজনৈতিক ও নাগরিক মহল। প্রশ্ন উঠেছে, একটি সংবিধানিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ পরিচয়ের সম্পর্ক কীভাবে তৈরি হয় এবং কে বা কারা এসব পরিচয়পত্র সরবরাহ করে থাকে?

জনমনে ধারণা তৈরি হয়েছে, এসব ছাত্র প্রতিনিধি নামধারীরা শুধু নামেই ছাত্র, বাস্তবে তারা চাঁদাবাজির নতুন মডেল। এই চক্রকে রাজনৈতিক ছায়ায় প্রশ্রয় দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত চলছে এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।