প্রকাশিত : ২৭ জুলাই, ২০২৫ ১৭:৪০ (রবিবার)
ছাতকে দিনে অচল দেখানো ড্রেজার রাতভর তান্ডব চালায়

দিনে নদীর তীরে অচল সাজিয়ে বেঁধে রাখা হয় ড্রেজার মেশিন, কিন্তু রাতে ফিরে আসে সচল দানব হয়ে। বালু মহালের বাইরে থেকে উত্তোলন করে হাজার হাজার ঘনফুট বালু।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর নৌপথে এখন নৌপুলিশের নজরদারি থাকলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালু উত্তোলন। ছাতকে পিয়াইন নদীতে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিরাতে হাজার হাজার ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে, যা কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় পাচার করা হয়। 

ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর মৌজায় ছাতক পৌরশহরের গণক্ষাই গ্রামের আকিক মিয়া চৌধুরীর রেকর্ডভুক্ত ১০৮.৯০ একর জমির পাশে এই চিত্র দেখা যায়। জায়গাটির আশপাশে পিয়াইন নদীর সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ অংশে ইজারা নেয়া বালুমহালের বাইরে। ওই এলাকা থেকে চলছে এ অবৈধ বালু লুট।

অভিযোগ উঠেছে, ইজারাদার আবু সাইদ অভির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রাজেন্দ্রপুর মৌজার জমিতে প্রতিদিন গভীর রাতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে ফসলি জমি ও নদীর পাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান জানান, 'ফসলি জমি কেটে বালু তোলায় এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি ২৩ জুলাই বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

প্রশাসনের একাধিক অভিযানে নৌকা জব্দ ও প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানার ঘটনা ঘটলেও থামেনি এ অবৈধ কর্মকাণ্ড। দিনে বন্ধ রেখে রাতে সচল করা হচ্ছে ড্রেজার।

স্থানীয়রা জানান, ‘অচল’ বলে দেখিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়।

২৭ জুলাই সরেজমিন দেখা যায়, ড্রেজার মেশিনটি পিয়াইন নদীর আমবাড়ি ও চাটিবহর এলাকার পশ্চিম দিকে রাখা হয়েছে। রাতে সেটি সরিয়ে এনে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নোঙর করে সারারাত বালু উত্তোলন করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত হয় ছোট নৌকা, যাতে করে শ্রমিকরা যাতায়াত করে।

প্রতিরাতে ৩০ থেকে ৪০টি নৌকা ও বাল্কহেডে বালু বোঝাই করে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু মহাল ঘিরে স্থানীয় দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সামনে দিয়েই প্রভাবশালীরা বালু তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ইজারাদার আবু সাইদ অভি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ইজারা এলাকায় বাইরে কোনো ড্রেজার বসানো হয়নি।’

নৌপুলিশ ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নদীপথে নজরদারি চলছে। অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। ফসলি জমি কাটার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।