প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৩২ (সোমবার)
স্মৃতিময় দিন

ছবি: সংগৃহিত।

স্মৃতিময় দিন

হারিয়ে গেছে স্বর্ণালী দিন, এখন সবই স্মৃতি
পাই না খুঁজে অতীত দিনের মায়া-মমতা-প্রীতি।
কিশোরীমোহন পাঠশালা আর এইডেড স্কুলে
স্কাউটিং, খেলা, হাসি আর গানে মাতিয়েছি সকলে।

পাড়ার চাটনি তলায় আড্ডা দিতুম, বন্ধুরা সব মিলে
কাটাতাম দিন হাসি-আনন্দ, ক্রিকেট আর ফুটবলে।
এত যে ছিল হৃদয়ের টান, ছিন্ন হবার ভয়
দিন শেষ হলে ভাবতাম বসে, সন্ধ্যা কেন যে হয়।

খেলেছি খেলা গদাইর হাওরে গায়ে কাদাজল মেখে
রোজ রবিবার বিকেল কাটত বাংলা সিনেমা দেখে।
স্কুল পালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি কত অচেনা পথে
খেলেছি, পড়েছি, ঘুরেছি সব বন্ধুরা একসাথে।

ঈদের দিনে নামাজ শেষে, বন্ধুরা সব মিলে
ঘুরে বেড়াতাম শাহী ঈদগার, টিলা আর জঙ্গলে।
আনন্দ আর হই-হুল্লোড়ে দিন কাটানোর বাদে
দেখেছি ছবি রংমহল আর লালকুটি-দিলসাদে।
যেখানে যেতাম-থাকতাম, সব বন্ধুরা একসাথে
ফুটবল, হকি, ক্রিকেট কিংবা আড্ডাতে মেতে।

কোথায় গেল বন্ধুরা সব সাহেদ আর সারওয়ার
সাকিল, মনা, ফায়েক, শাহিন, মওদুদ, লেওয়ার।
সফিক, নকীব, মৃত্যুঞ্জয়, শ্যামল, সুবাস, শীরু
খোকন, সেলিম, অঞ্জন, ঈসা-পাই না দেখা কারো।

সময়ের তালে পা রেখে সব ধরেছে ভিন্ন পথ
চাটনি তলার আড্ডা ভুলেছে, নিয়েছে ভিন্নমত।
কেউবা নিয়েছে ছোট চাকরি, কেউবা করছে ব্যবসা
বেকারত্বের যাঁতাকলে পড়ে কারো কারো চোখ ঝাপসা।

উনিশশো নব্বই এ সিলেট শহর ছেড়ে
ফিরে এলাম জন্মমাটি  বিয়ানীবাজারে।
গাঁয়ের মাঠে খেলেছি খেলা ছোট-বড় সব মিলে
ঈদের মিছিলে সামিল হয়েছি সব বন্ধুরা দলে দলে।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে সালাম করেছি, খেয়েছি সন্দেশ
ছোটবেলার সেই ঈদ আনন্দের পাই এখনো রেশ।
আড্ডা দিয়েছি স্কুলের মাঠ আর নাজিমের হোটেলে
হাসি-গান শেষে বাড়ি ফিরেছি সন্ধ্যা ঘনালে।

কোথায় গেল বন্ধুরা মোর আলতাফ, বদরুল
আক্রম আলী, সালেক, সমছু, রমিজ আর ময়নুল।
আজির, জমির, মুসলেহ, নেহার, কয়েছ ও আজিম
সাইফ উদ্দিন, আবু, তাজুল, বদরুল আর আলিম।
সন্ধি, সেজু, কেতকি, তুষার, জয়নাল, ফরহাদ
যাত্রা, পালা, গানে, আড্ডায় পেয়েছি কত না স্বাদ।
বন্ধুরা সব মিলে-মিশে গড়েছি অনির্বাণ
আড্ডা, খেলা, পিকনিক, গানে ভরা ছিল মন-প্রাণ।


বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে একসাথে সবে পড়েছি
নাটক, আড্ডা, হাসি আর গানে কলেজ মাতিয়ে রেখেছি।
কলেজের কৃষ্ণতলায় আড্ডা দিতুম, বন্ধুরা সব মিলে
কাটাতাম দিন হাসি-আনন্দ, নাটক আর মিছিলে।

কলেজের সেই দিনগুলো ছিল হাসি আর গানে ভরা
কৃষ্ণতলার আড্ডায় কেউ থাকত না মনমরা।
ডেক্স  ঠোকরে তবলা বাজাতো বন্ধু দেলোয়ার
গান গাইতাম আমিও, রুহেল-শ্রোতা ছিল বেসুমার।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতো হাসি-গানের এ আসর
ছুটি হয়েছে, বাড়ি যেতে হবে-ছিল না টান কারোর।


প্রায় ৪ মাইল পথ হেঁটে পড়ে কলেজে হতো যে আসতে
দূর হয়ে যেত হাঁটার কষ্ট, একসাথে দিন কাটাতে।
কলেজ ক্যাম্পাস মুখরিত হতো আমাদের উল্লাসে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়তাম বাংলা স্যারের ক্লাসে।

মোহড়া হতো গান বা নাটকের প্রতিদিন
এ কলেজ ছেড়ে চলে যেতে হবে-ভাবিনি কো কোনদিন।
আজও চোখে ভাসে কলেজের সেই স্মৃতিমাখা দিনগুলি
হাসি-আনন্দে ভরা দিনগুলো কেমন করে যে ভুলি।

কোথায় গেল বন্ধুরা মোর ফরুক আর দেলোয়ার
শুকুর, জালাল, স্বপন, ঝুনু, ফয়সল, কাওসার।
খোকা, আবু, মুক্তা, মনি, জসিম, নুরুজ্জামান
জয়নাল, শেলু, জামান, সালেহ, ইকবাল ও জিবান।

ময়নুল, নুরুল, অপু, তমাল, নোমান, গুলজার
নারায়ণ, কয়েছ, বুলবুল, আর সঞ্জয়, আনোয়ার।
ফরিদা, নিপা, ফাতেহা, রুমা, চঞ্চল, লাইলী
ছানা, সুখী, চায়না, শাহেদা, মান্না, পলি, কলি।

হারিয়ে গেছে বন্ধুরা মোর সময়ের ব্যবধানে
স্মৃতিময় সেই দিনের কথা বারেবারে পড়ে মনে।