প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:১০ (সোমবার)
লোভাছড়া পর্যটন স্পট পাথর লুটে বিনষ্ট হওয়ার পথে

ছবি- সংগ্রহ

নদীকেন্দ্রিক পর্যটন স্পট জাফলং ও ভোলাগঞ্জের পর তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন স্পট লোভাছড়াও পাথর লুটের কারণে বিনষ্ট হতে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানেও ছাত্রদলের এক নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লুটেরা চক্র সক্রিয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ লাগাতার প্রতিবাদ করলেও লুটের ধারায় কোনো হেরফের নেই।

২০২০ সালে এই এলাকার পর্যটন রক্ষায় স্থানীয় পাথর কোয়ারির পাথর লিজ নেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক কোটি চার লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জের জিম্মায় দেয়। এ পাথর প্রায় পাঁচ বছর সেখানে থাকলেও গত তিন মাস আগে সেখান থেকে ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামে ৯টি শর্ত সাপেক্ষে পিয়াস ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। পাথর সরানোর জন্য ৬ মে ২০২৫ ইংরেজি থেকে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়। বাকি ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর তিনটি রিট মামলা ( রিট পিটিশন  নং ভিসি ১০৩১/২০২০, ভিসি ১০৫০/২০২০, ভিসি ১০৫৫/২০২০) এর জব্দ পাথর হিসেবে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জের জিম্মায় রেখে দেওয়া হয়।

পিয়াস ট্রেডার্সের মালিক সিলেট মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পলাতক নেতা তমিজ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মইনুলের সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। এই আওয়ামী লীগ নেতারা স্থানীয় আরও চল্লিশজন নেতাকে তাদের পাথর ব্যবসায় যুক্ত করেন।

এর পরই শুরু হয় কোয়ারিতে পাথর লুট। গোটা লোভাছড়ার সর্বত্র খনন করে পাথর উত্তোলন করতে থাকে এই একচল্লিশ লুটেরা। তারা প্রথম ৪৫ দিনে তাদের নিলামের পাথর সরিয়ে নেওয়ার পর নতুন করে উত্তোলিত ২০ লাখ ঘনফুট পাথর সিলেট, ছাতক ও আটগ্রামে নিয়ে যায়। এরপর বন্যার কারণ দেখিয়ে তারা আরও এক মাস সময় বাড়ায়। সে মেয়াদও ২৩ জুলাই শেষ হয়ে যায়।

এই মেয়াদোত্তীর্ণের পর তারা চোখ রাখে রিট মামলার ৬০ লাখ ঘনফুট জব্দ পাথরের ওপর। কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আউয়ালের নিষ্ক্রিয়তাকে পুঁজি করে হাইকোর্টের মামলার বিষয়টিও উপেক্ষা করে লুট অব্যাহত রাখে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আপত্তি করলে শ্রমিকদের বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন চালায় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে নির্যাতিতরা কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ জানায়।

বর্তমানে লোভাছড়ার গোটা পর্যটন এলাকা জুড়ে এই লুটেরা চক্র ক্রাশিং মিল বসিয়ে দিনরাত পাথর ভাঙছে এবং পর্যটন স্পট থেকে আহরণ করছে পাথর। এসব এলাকায় প্রতিদিন পর্যটকরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন লুটেরাদের সন্ত্রাসীদের হাতে।

লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন জানান, তাদের এই পাথর লুটে গত ২ মাস ধরে সরকারের সকল দপ্তরে অভিযোগ দেয়ার পরও আজ পর্যন্ত সরকারের কোন বিভাগ এই অভিযোগ সমুহকে গুরুত্ব দেয় নি। তাই ইউনিয়নবাসী তাদের ন্যায্য প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।

পিয়াস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ছাত্রদল নেতা কামরুল হাসান বলেন, “আমার নিলামের পাথর এখনো লোভাছড়ায় রয়েছে। তাই সেখান থেকে আমার লোকজন পাথর পরিবহন করছে। মেয়াদ শেষে সময় বাড়ানোর জন্য আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছি। এখনো আদালতের আদেশ বিএমডিতে যায়নি।”

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল আউয়াল জানান, তার জিম্মায় কোনো পাথর রয়েছে বলে খনিজ সম্পদ ব্যুরো তাকে বুঝিয়ে দেয়নি। তাই কোন পাথর নিলামের আর কোন পাথর জব্দ সে বিষয়ে তার স্পষ্ট ধারণা নেই। এজন্য পাথর পরিবহনে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। এদিকে পাথর সরবরাহের মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়ে নজরদারির দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। তিনি যে আদেশ দেবেন তা পালন করা হবে।