প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০২৫ ২০:৪৩ (সোমবার)
রাংপানি পর্যটন স্পটও পাথর ডাকাতের কবলে

পাথর লুট চলছে রাংপানি পর্যটন এলাকায়। ছবি: ইমজা নিউজ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর এলাকায় অবস্থিত রাংপানি পর্যটন স্পটও পাথর ডাকাতের কবলে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক ও চিহ্নিত কিছু গোষ্ঠী নদী ও পাহাড় থেকে পাথর কেটে লুটপাট চালাচ্ছে। এর ফলে পর্যটন এলাকার ট্রেডমার্ক পাথরগুলো এখন অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, 'দিন নেই রাত নেই, রাংপানির পাথর কেটে নৌকায় তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বিএনপির লোকজনের পাশাপাশি কয়েকজন আওয়ামী লীগের চিহ্নিত লুটেরারাও এতে জড়িত।'

রোববার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে ঘটনা স্থলে গেলে দেখা যায়, রাংপানির পরিচিত পাথরগুলো আর পাথরের জায়গায় নেই। পাথর সরানোর চিহ্নগুলো রাংপানির টিলা ও ছড়ার গায়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। এ পাথর দিনে দুপুরেই লুটেরারা নিয়ে গেছে।

জৈন্তাপুরের সহকারী কমিশনার ভুমি রজানা আক্তার লাবনী ইমজা নিউজকে বলেন, 'পর্যায়ক্রমে রাংপানিতেও আমাদের অভিযান চলবে। তবে পুরো সমস্যার সমাধান করতে কিছুটা সময় লাগবে। প্রশাসন নিয়মিত মাঠে রয়েছে, তবে এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম রোধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

রাংপানি পর্যটন এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে মোকামপুঞ্জি এলাকায় অবস্থিত এই স্থানটি মূলত সীমান্তবর্তী নদী রাংপানি ও আশেপাশের পাহাড়ের কারণে জনপ্রিয়। শ্রীপুর নামের অর্থই ‘সুন্দর’, এবং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ জলের নদী এখানে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

রাংপানি নদীর উৎস মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে। স্থানীয়দের ভাষায়, রাংপানি নদীর পাথর খনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এই এলাকা নানা প্রজন্মের পর্যটক ও পরিবেশপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়।

নদীর তীরের খাসিয়া সম্প্রদায়ের গ্রাম মোকামপুঞ্জি, যাকে স্থানীয়রা শুধু ‘পুঞ্জি’ নামে ডাকে, এ এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাক্ষী। পুঞ্জিতে গেলে দেখা মেলে খাসিয়াদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

রাংপানি পর্যটন এলাকা সিনেমা শুটিংয়ের ক্ষেত্রেও পরিচিত। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক দৃশ্য শ্রীপুরে ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শাবনাজ-নাঈম জুটির প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’-র কিছু দৃশ্য শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে চিত্রায়িত হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশের দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়েছে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসন যদি আরও সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে রাংপানি পর্যটন এলাকা আবারও আগের মতো প্রাণবন্ত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

তবে তাদের দাবি, নদী ও পাহাড় থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন এলাকার সম্পদ রক্ষা করা কঠিন।