প্রকাশিত : ২২ আগস্ট, ২০২৫ ১৫:৫২ (বৃহস্পতিবার)
পাথর লুটের দায় বিজিবি এড়াতে পারে না : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব

ছবি: ইমজা নিউজ

সিলেটের ভারত সীমান্তবর্তী সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাশেই বিজিবি ক্যাম্প, তাদের চোখের সামনেই অপরাধিরা হরিলুট করেছে। আর তাই সিলেটে পাথর লুটপাটের দায় বিজিবি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না, বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেছুর রহমান। পাথর লুটপাটের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের করা তদন্ত দল তিনি নিয়ে শুক্রবার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তদন্ত দল আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

শুক্রবার সকালে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোখলেছুর রহমান বলেন, সাদাপাথর সহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে প্যাকেজ প্রোগ্রাম নেওয়া হবে। ২৪ ঘন্টা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সাদাপাথর। 

পাথর লুটপাটে প্রভাবশালী রাজনীতিক বা প্রশাসনের বড়কর্তাদের যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব। তিনি সাদাপাথর ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।

গত ২০ আগস্ট সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি করা হয়, পাথর লুটের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগি ছিলেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা। লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগে ৪২ জন নেতা ও ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে জড়িয়েছে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ৪ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি ও বিজিবি সদস্যদের নামও। 
ঘটনার প্রেক্ষিতে গত সোমবার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহারকে।

পাথর লুটে নাম আসায় বিষয়টিকে ভূয়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফকরুল ইসলাম ও এনসিপির সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন।

চাঁদা নিত বিজিবি!

 সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় (বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) বিজিবিরও সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুদক। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, টাকার ভাগ পেয়ে বিজিবি সদস্যরা চুপ থাকতেন। লুটপাট ঠেকাতে কোন উদ্যোগ নেননি। যদিও বিজিবি কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সাদপাথরের পাথর লুটের ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপ পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি টিম সাদাপাথর পরিদর্শন করে। এরপর তারা ১৬ আগস্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে বিজিবিকে দায়ী করা বলা হয়, সাদা পাথর এলাকায় ৩টি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। এগুলো হতে লুটের ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৫০০ মিটার থেকেও কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে সহজেই পাথর লুটপাট হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা প্রতি নৌকা ৫০০ টাকার বিনিময়ে এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং পাথর উত্তোলনের সময় বাধা প্রদান করেননি।

তবে বিষয়টি অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক।