প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৫১ (বৃহস্পতিবার)
রাজশাহীর মাইজভান্ডারী গাউছিয়া পাক দরবার শরীফে’ হামলা,ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত।

এবার রাজশাহীর পবা উপজেলায় মাইজভান্ডারীর একটি দরবারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী গাউছিয়া পাক দরবার শরীফে’ এ হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় টিন দিয়ে ঘেরা খানকা মুর্হুর্মুহু আঘাতে ভেঙে যায়।

এ দরবার শরীফটি স্থানীয় আজিজুর রহমান ভান্ডারী প্রায় ১৫ বছর আগে নিজ বাড়ির পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ভক্তদের কাছে ‘পীর’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছরের মতো এবারও এখানে ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত চলার কথা ছিল এ আয়োজনের। তবে সেখানে নারী শিল্পী দিয়ে ভান্ডারী ও মুর্শিদী গান পরিবেশিত হওয়ায় এলাকায় আগে থেকেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম আশঙ্কা থেকে জুমার নামাজের সময় দুই গাড়ি পুলিশ মোতায়েন করেছিলেন। তবুও নামাজ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবার শরীফে হামলা চালায়। হামলার সময় ‘পীর’ আজিজুর রহমান ভান্ডারী বাড়ি থেকে বের হননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন ধরে স্থানীয় কিছু লোক অনুষ্ঠান বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। গতরাতে তারা থানায়ও গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানা যায়নি। জুমার নামাজের পর তারা এক হয়ে খানকায় হামলা চালায়। ভক্তরা তাকে নিরাপত্তার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে দেননি।

তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাও ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে গোলাম মোস্তফা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গতরাতে তিনি থানায় গিয়েছিলেন পুলিশের ডাকে। কিন্তু হামলার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। পরে এসে ঘটনাটি শুনেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন, গোলাম মোস্তফা বিএনপির পুরোনো কর্মী। তিনি হামলায় জড়িত কি না জানা নেই। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন-খানকা ভাঙার দরকার কী? যার বিশ্বাস, সে তার মতো করবে। বিএনপি হলেও কেউ এ ধরনের ঘটনায় ছাড় পাবে না। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পবা উপজেলার আমীর আযম আলী দাবি করেন, তাদের দলের কেউ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি বলেন, নিজেদের কাজ শেষ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, খানকা ভাঙতে তাদের লোক যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ওসি মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, গতরাতে খানকার বিষয়ে অনেক মানুষ থানায় এসেছিল। তাদের শান্ত থাকতে বলা হয়। তবে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ খানকা থেকে কিছুটা দূরে ছিল। এ সময় হঠাৎ উত্তেজিত জনতা হামলা চালায়। মানুষের ভিড় এত বেশি ছিল যে অল্পসংখ্যক পুলিশ কিছু করতে পারেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে থানায় অভিযোগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজিজুর রহমান ভান্ডারী। তিনি বলেন, আমি অভিযোগ করব না। আমি মানবধর্ম করি, আমার কাছে সবাই আসে। সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন। তারা ভেঙে খুশি হয়েছে, হোক।'