প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৩:২৮ (বুধবার)
নুরা পাগলার দরবারে হামলা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হয়নি

ফাইল ছবি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘটিত হামলার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে হামলায় অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন, এর মধ্যে ১০–১২ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুরাল পাগলার ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়। ভক্তরা মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচু করে তার লাশ দাফন করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আলেম ও তৌহিদি জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি পূরণে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দফায় দফায় দরবারে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা শরিয়ত পরিপন্থীভাবে দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেন। পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, উত্তেজিত জনতা দরবারে ঢুকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ আগুন লাগিয়ে মালামাল লুটপাট করে।

দরবারের ভেতরে এখন ধ্বংসস্তূপের চিত্র। তিনতলা ও দুইতলা ভবনের সব কক্ষ ধ্বংস হয়ে গেছে। আসবাবপত্র খোয়া গেছে, অবশিষ্ট জিনিসপত্র ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে, কেউ কেউ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্র কুড়িয়ে নিচ্ছেন।

নুরাল পাগলার বাড়ি ও দরবার দেখতে শুক্রবার রাত থেকে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয়রা জানান, নুরাল পাগলার টিনশেড ঘরে বসে ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। মৃত্যুর আগে সেখানে সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট উঁচু করে বেদি তৈরি করা হয়। এই বেদির ওপর তার লাশ দাফন করা হয়েছিল।

হামলায় আহতদের মধ্যে রাসেল মোল্লা নামের একজন ভক্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। স্থানীয়রা বলেন, তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। হামলায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, এবং আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।”
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছি।”
পুলিশ সুপার (এসপি) আশিকুল ইসলাম বলেন, “দরবার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশের টহল চলছে এবং জনতার সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে।”

স্থানীয় ও আগত মানুষরা বলেন, ‘নুরাল পাগলার কাজ বিতর্কিত হলেও লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি’। কুষ্টিয়ার পোড়াদাহ থেকে আসা আবুল হোসেন বলেন, ‘বিপত্তি সংবাদ দেখে রাতে গোয়ালন্দে এসে দেখলাম। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

শুক্রবার হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।