ছবি: সংগৃহীত।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ‘গ্রাম থেকে হাটে’ কর্মসূচি শুরু করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের সহধর্মিনী সালমা নজির। এই কর্মসূচিতে গ্রাম ও হাট-বাজারে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি এবং নির্বাচনি এলাকার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সালমা নজির জানিয়েছেন, কর্মসূচির লক্ষ্য হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে বিএনপির নীতি ও পরিকল্পনা পৌঁছে দেওয়া। এ সময় গ্রামে-বাজারে বিশেষ প্রচারপত্র ও বুকলেট বিতরণ করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগ, কৃষি, মৎস্য ও স্বাস্থ্যসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান ধারণ করা হয়েছে।

সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন জাতীয় রাজনীতির বিজ্ঞজন হিসেবে পরিচিত। আশির দশকে হাওরে ভাসান পানির আন্দোলন সংঘটিত করে জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় এসেছিলেন। ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় তিন জোটের রূপরেখা তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছিলেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নজির হোসেন সুনামগঞ্জ-১ আসনে প্রথম নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে এ দুটো নির্বাচনে জয়ী হতে না পারার জন্য পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ভোটাধিকার হরণকে দায়ী করেন তার সমর্থকরা।
সবশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান খ্যাত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ভোটের রাজনীতিতে সেই হারজিত ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। বলা হয়েছিল ‘নজিরের নজিরবিহীন বিজয়’।
বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে শীর্ষ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংগঠনিক দক্ষতার জনপ্রিয়তায় তিনি দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সেই বিজয়ে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনি এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন।
বুকলেটে সেই প্রচারপত্রের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। বুকলেটে বলা হয়, ‘উদ্ভাবনী উন্নয়নচিন্তার বাস্তবায়নে বিকল্প মেলেনি বলে এলাকাবাসী তাদের প্রিয়নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনকে ভুলতে পারছেন না। সর্বশেষ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জননেতা নজির হোসেনের হাতে ধানের শীষের যে নজিরবিহীন বিজয় অর্জিত হয়েছিল, সেই বিজয়-অর্জন দেখতে হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা ধন্য হয়েছিল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিভ্রমণে। ফ্যাসিবাদী শাসনে ভোটাধিকার হরণের মধ্য দিয়ে ধানের শীষের সেই বিজয়ের ধারাও হরণ করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় নির্বাচন সামনে। এ নির্বাচন হোক ধানের শীষের বিজয়ে আসন পুনরুদ্ধারের। তবেই ফিরবে হাওরাঞ্চলের সুদিন।’
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নের উলুকান্দি, আছানপুর, মাহমুদপুর, মদনাকান্দি, হরিনাকান্দি ও তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পন্ডুপ বাজারে ‘গ্রাম থেকে হাটে’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির ভোটের প্রচারণা করছেন বলে জানান সালমা নজির।
সালমা নজির বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে সুদিন ছিল। পরবর্তীতে মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। তাই জনগণের সমস্যার সমাধান ও অগ্রগতির জন্য এই কর্মসূচি শুরু করেছি।’
প্রচারপত্রে হাওরাঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাওর বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা ও নৌযান নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, নদী-খাল খনন, বর্ষাকালীন ধান চাষ ও মৎস্য সংরক্ষণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ।