প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:৫৯ (সোমবার)
চলে গেলেন লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন

ছবি: ফরিদা পারভীন

লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ফরিদা পারভীন আর নেই।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্বামী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এই গুণী শিল্পী। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সবশেষ চিকিৎসকদের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। শৈশবে মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতে হাতেখড়ি হয় তাঁর।

১৯৬৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করেন তিনি। শুরুতে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গান গাইলেও লালনগীতিই তাঁকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বিশ্বজোড়া খ্যাতি।

ফরিদা পারভীন প্রথম লালনগীতি শেখেন লালনসংগীতের পুরোধা মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে। এরপর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে তালিম নেন।

তাঁর কণ্ঠে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘সত্য বল সুপথে চল’, ‘নিন্দার কাঁটা’সহ অসংখ্য গান এখনও বাঙালির হৃদয়ে বাজে।

৫৫ বছরের দীর্ঘ সংগীতজীবনে তিনি দেশ-বিদেশে লালনগীতি ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডেনমার্কসহ বহু দেশে লালনগীতি পরিবেশন করেছেন।

লালনসংগীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান।

এছাড়া ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাপানের সম্মানজনক ফুকুওয়াকা পুরস্কারে ভূষিত হন।

লোকসংগীতের এই মহারথীর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনসহ দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।