
ছবি: সংগৃহীত।
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায়ও গতকাল রোববার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজেদের আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এ আলোচনায় কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বিএনপি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দেয়। দলটি মনে করে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। জামায়াতও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাইলেও তাদের দাবি, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে সেটি হবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। অপরদিকে এনসিপি বলেছে, সংবিধান সংশোধন টেকসই করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। এটি শুধু নির্বাচন নয়, বরং জাতির নবজন্মের মহোৎসব হবে, যদি আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।’
মেয়াদ বাড়ছে কমিশনের
আজ সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দল মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের মেয়াদ আরেক দফায় বাড়ানো হচ্ছে এবং আগামী বুধবার আবারও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে।
দলগুলোর ভিন্ন মত
বিএনপি: সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে নির্বাচনকে কোনো শর্তের সঙ্গে যুক্ত না করার কথা বলেছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামী: সনদ বাস্তবায়নের জন্য ‘প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার’ বা গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে।
এনসিপি: টেকসই বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
কমিশনের অগ্রগতি
এ পর্যন্ত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে দুই দফা আলোচনায় ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে সনদ আটকে আছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
আলোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।