ছবি: সংগৃহীত।
ঢাকার রায়েরবাজার শহীদ বধ্যভূমিতে ডাকসু নির্বাচনের বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা দোয়া ও মোনাজাত করেছেন। এটি জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সিদ্ধান্তে করা হয়েছে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জামায়াত-সমর্থিত কোনো সংগঠন শহীদ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হলো।
ঘটনাটি একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার বিষয়ে জামায়াতের দীর্ঘদিনের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম আরও দেখা যেতে পারে।
জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে দলের ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে নীতিনির্ধারণী নেতারা আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী। শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা উপযুক্ত প্রেক্ষাপট ও অনুকূল পরিবেশ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সমর্থন না পাওয়ায় তিনি ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন এবং সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্য সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। কারাগার থেকে তিনি দলের সংস্কার ও নতুন কর্মকৌশল গ্রহণের পরামর্শ দিতেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও পর্যায়ক্রমিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু একাত্তরের প্রশ্ন নয়, দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও নীতিগত সিদ্ধান্তেও পরিবর্তন শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে রুকন বা শপথধারী সদস্যের শর্ত শিথিল করা হবে। ধর্ম ও নৈতিকতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ, গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে এবং অন্য ধর্মাবলম্বী প্রার্থীর ক্ষেত্রেও উদার নীতি গ্রহণ করা হবে।
ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আজ স্বাধীন। তাই তাঁদের স্মরণ করাই আমাদের প্রথম কাজ’। বিজয়ীদের মধ্যে ভিপি মো. আবু সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ এবং এজিএস মুহা. মহিউদ্দীন খান রয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে এবং বাংলাদেশ গঠনে যাঁদের অবদান আছে, আমরা তাঁদের সম্মান করি। তাই বিজয়ীরা শহীদদের কবর জিয়ারত করে দোয়া-মোনাজাত করেছেন।’
১৯৭৭ সালে ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রথমবারের মতো তারা শহীদ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হলো।