প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৫০ (বুধবার)
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে জামায়াত-এনসিপির দূরত্ব, জোট নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছবি: সংগৃহীত।

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে কিছুদিন আগেও জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য দেখা গেলেও এখন সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে জামায়াতের ডাকা যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়নি এনসিপি।

যুগপৎ আন্দোলনে ফাটল

সোমবার জামায়াতে ইসলামী ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সেখানে নেই এনসিপি। অথচ গত কয়েক মাসে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে নির্বাচন সংস্কার ইস্যুতে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। এনসিপির ভেতরে এখন দুটি ধারা কাজ করছে-এক পক্ষ জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চায় না, অন্য পক্ষ সংস্কার নিয়ে জামায়াতের কিছু দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সংস্কারের সব দাবিতে একমত না হওয়া এবং নির্বাচনি জোট নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় আপাতত জামায়াতের সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি এনসিপি।’

জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে। এ ইস্যুতে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল শুরুতে কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। এমনকি গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও তুলেছিল জামায়াত ও এনসিপি।

তবে পিআর পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে পার্থক্য তৈরি হয়। জামায়াত উচ্চ ও নিম্ন-দুই কক্ষেই পিআর পদ্ধতি চায়, অথচ এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে এ পদ্ধতির পক্ষে। এ কারণেই যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে এসেছে এনসিপি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের অনেক দাবির মিল আছে। আপাতত তারা কর্মসূচিতে না এলেও ভবিষ্যতে তাদের অবস্থান বদলাতে পারে।’

নির্বাচনি জোট নিয়েও সংশয়

আগামী ফেব্রুয়ারির ভোট সামনে রেখে জামায়াত ইসলামী তাদের মিত্র দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর সমঝোতা গড়তে চাইছে। তবে এনসিপি আপাতত এ আলোচনার বাইরে। দলের একাংশ ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোটের বিপক্ষে।

এনসিপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে ভোট করে যদি বিরোধী দলই হতে হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই এখনই জোটে যাওয়া আমাদের কৌশলগত স্বার্থে নয়।’

ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন ইসলামপন্থী ও বামপন্থী দুই বলয়ের তরুণরা। সাম্প্রতিক সময়ে এ দুই বলয়ের মধ্যে মতভেদ বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপি-সমর্থিত সংগঠনের ভরাডুবির পর জামায়াতপন্থী শিবিরের সাফল্য দলের ভেতরে হতাশা ও বিভাজন তৈরি করেছে।

এনসিপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বামপন্থী অংশ জামায়াতঘেঁষা অবস্থান থেকে দলকে সরিয়ে আনতে চায়।

তবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে এখন আমাদের দূরত্বও নেই, সখ্যতাও নেই। শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা আপাতত নিজস্ব কর্মসূচি নিয়েই সামনে এগোতে চাই।’

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, এনসিপি একটি নতুন দল, যেখানে বিভিন্ন মতাদর্শের তরুণরা আছে। ‘এই বৈচিত্র্যের কারণে মতভেদ স্বাভাবিক। আপাতত এটিকে দূরত্ব মনে হলেও নির্বাচনের সময় কৌশলগত পরিবর্তন আসতে পারে।’