প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৩৫ (বুধবার)
অজ্ঞান পার্টি’র মতো ভয়ংকর অপরাধের দিকে ঝুঁকছে সিলেটের যুবসমাজ

ছবি: সংগৃহীত।

সিলেটে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে অজ্ঞান পার্টির ভয়ংকর নেটওয়ার্ক। দীর্ঘদিন ধরে এ অপরাধচক্র মূলত রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি সিলেটে এর বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। 

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সিলেটের তরুণ ও যুবক শ্রেণীও এখন এই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। যে সিলেটের তরুণ সমাজ একসময় এ ধরণের অপরাধ থেকে দূরে ছিল, দিন দিন সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালালাবাদ থানা পুলিশ অজ্ঞান পার্টির ৫ সদস্যকে আটক করে। এরা সবাই সিলেটের বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে মানুষকে অজ্ঞান করার নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার আটককৃতদের আদালতে হাজির করলে বিচারক তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় পুলিশ আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে, যার শুনানি আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-শাহপরাণ থানার পীরের বাজার টিকরপাড়ার মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে রুকন মিয়া (২৭), শাহী ঈদগাহ এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে রায়হান আহমদ জিসান (৩৪), আম্বরখানার পীরমহল্লার রহমত আলীর ছেলে মো. রবিউল আলম (২৬), খাসদবীর এলাকার মৃত শফিক মিয়ার ছেলে সোহেল আহমদ (৪৮) এবং একই এলাকার মৃত আনু মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম (৫০)।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) একটি সূত্র জানায়, আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ চক্রে অন্তত ১৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের নাম-পরিচয়ও পুলিশ চিহ্নিত করেছে। যেকোনো সময় তাদেরও আটক করা হতে পারে। পুলিশের বিশ্বাস, সিলেট নগরীতে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এ চক্র, যারা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল মানুষকে টার্গেট করে সর্বস্ব লুটে নেয়।

এসএমপি জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরেই এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিকবার অভিযোগ আসে যে, অচেনা কিছু লোক যাত্রী বা পথচারীকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়েছে। আটক হওয়া ৫ জন দীর্ঘদিন ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং তারা নিজেদের স্বার্থে তরুণদেরও এই অপরাধে টেনে নিচ্ছিল।

ফৌজদারী অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট দেওয়ান মিনহাজ গাজি বলেন, `যুব সমাজকে যদি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া না হয়, তবে তাদের একটি অংশ অপরাধ নির্ভর আয়ের পথে চলে যায়। সিলেটেও সেই একই সূত্রে অপরাধে যুবসমাজ জড়িয়ে পড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।'

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, অজ্ঞান পার্টির এই বিস্তার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে কর্মসংস্থান বাড়ানো ও তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করার ব্যবস্থা না নিলে এ ধরণের অপরাধ দমন করা কঠিন হয়ে পড়বে।