
ছবি: সংগৃহীত।
অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতে ইসলামকে ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক আগ্রহ। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটিকে কাছে টানতে তৎপরতা শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচনী সমঝোতার পথে এগোচ্ছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু দল হেফাজত-সংশ্লিষ্ট, যারা অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্বের যোগাযোগও বেড়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকায় হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে ১ আগস্ট বিএনপির নেতারা চট্টগ্রামে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হেফাজতের শীর্ষ চার নেতাকে নিয়ে আয়োজিত কনফারেন্সেও বক্তব্য দেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
জামায়াত নিয়ে দ্বিমত
হেফাজতের আমির বাবুনগরী একাধিক বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কোনো দল জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বাঁধুক তা তিনি চান না। তাঁর দাবি, জামায়াত প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর আদর্শ অনুসরণ করে, যা ‘সহিহ ইসলাম’ নয়। এই বক্তব্য বিএনপির জন্য রাজনৈতিকভাবে সহায়ক বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মনে করেন, এটি হেফাজতের অবস্থান নয়, বরং সংগঠনের আমিরের ব্যক্তিগত মত। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে সম্মান করি। তবে এমন বক্তব্য খাঁটি মোমিনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।’
হেফাজতের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বাবুনগরীর ধারাবাহিক জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে হেফাজতের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে থেকে সরাসরি রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া বিতর্কিত হতে পারে। তবে তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ ও শ্রদ্ধাভাজন আলেম হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করছেন না।
বিএনপির কৌশল
বিএনপির নেতারা বারবার হেফাজতের আমিরের সঙ্গে দেখা করছেন। ইসলামপন্থী দলগুলোর একটি অংশ মনে করছে, বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ভোটব্যাংককে সক্রিয় করতে হেফাজতকে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে বিএনপি নেতারা এটিকে ‘শুভেচ্ছা বিনিময় ও দোয়া প্রার্থনা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
হেফাজত-সংশ্লিষ্ট দলগুলোর অবস্থান
বর্তমানে সাতটি ইসলামপন্থী দল একযোগে সংখ্যানুপাতিক ভোটব্যবস্থা ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচি করছে। এদের মধ্যে পাঁচটি দলের সঙ্গে হেফাজতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ সরাসরি বিএনপির সঙ্গে আছে। বিশেষ করে জমিয়তের একাধিক নেতা বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সব মিলিয়ে, হেফাজতে ইসলামকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠছে। আগামী নির্বাচনে এই সংগঠন কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।