https://www.emjanews.com/

10789

sylhet

প্রকাশিত

২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৬

আপডেট

২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৭

সিলেট

সিলেট-১ আসনেই সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ! উত্তপ্ত বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধ

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৬

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনকে ঘিরে সবসময়ই থাকে বাড়তি আগ্রহ। প্রচলিত একটি কথা রয়েছে-‘সিলেট-১ আসনে যে দল জয়ী হয়, সে দলই সরকার গঠন করে।’ ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। প্রতিবারই সিলেট-১ আসনের ফল সরকারের পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়েছে।

এ আসনটিকে দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  তাই প্রতি নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থিতা মানেই হেভিওয়েট নেতাদের লড়াই।

বিএনপির অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা

সিলেট-১ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে দলের দুই উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের মধ্যে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। অন্যদিকে মুক্তাদির প্রয়াত এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র এবং সিলেট বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের প্রতিনিধি।

দলীয় অভ্যন্তরীণ বলয়ে সাইফুর-খন্দকার বিরোধের ধারাবাহিকতায় আরিফুল ও মুক্তাদির এখন সিলেট বিএনপির দুই ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি মুক্তাদিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সুযোগে আরিফুল মাঠে দখল দৃঢ় করেন এবং বুধবার বিশাল শোডাউন করে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে মুক্তাদিরও নিউইয়র্কে প্রবাসীদের এক মতবিনিময় সভায় একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন সভায় আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ‘সিলেট-১ নতুবা মেয়র পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন

অন্যদিকে মর্যাদার এই আসনে জামায়াত ইসলামি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পরিবর্তে জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে সিলেট-৬ থেকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

সিলেট-২: ‘ইলিয়াসের আসন’

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর এই আসন এখনও তার নামেই পরিচিত। দলের মধ্যে প্রার্থীতা নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের মধ্যে লড়াই সবচেয়ে আলোচিত। এলাকায় ইলিয়াসের প্রতি সহানুভূতি থাকায় তাহসিনাই এগিয়ে আছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

সিলেট-৩: একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালামসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কাইয়ুম তৃণমূলের জনপ্রিয়, মালেক প্রবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সালাম কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী। এছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. ফয়েজ উদ্দিন এমবিইও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে মাওলানা লোকমান আহমদকে।

সিলেট-৪: সবচেয়ে হট আসন

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন মিফতাহ সিদ্দিকী, হাকিম চৌধুরী, বদরুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিমসহ বেশ কয়েকজন। জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। একঝাঁক বিএনপি প্রার্থী ও জামায়াতের শক্ত অবস্থান মিলিয়ে এখানে ভোটযুদ্ধ বেশ তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিলেট-৫: সম্ভাবনায় জমিয়ত

বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশীদ মামুন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, প্রবাসী নেতা জাকির হোসেন ও প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা তানজীন চৌধুরী। তবে এ আসনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুকের অবস্থান শক্ত। ফুলতলীর পীর অনুসারীদের প্রভাব থাকায় বিএনপি শেষ পর্যন্ত জমিয়তকে আসনটি ছাড় দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সিলেট-৬: চৌধুরী বংশের আধিপত্য

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ড. এনামুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, সৈয়দা আদিবা হোসেন, সাবিনা খান পপি ও অভিনেতা হেলাল খান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন মুখ সেলিম উদ্দিনকে মাঠে নামিয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের রাজনীতি বরাবরই জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশক। তাই আসন্ন নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের ফল এবারও দেশের রাজনৈতিক চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে আনবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।