ছাতকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অভিযান, ২৪০ মামলা দায়ের
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:১৩

ছবি: সংগৃহীত।
সরকারি জমি ও নদী সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ছাতকে প্রশাসন ও বালুখেকোদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। উপজেলা প্রশাসন কঠোর অভিযান চালিয়ে সরকারি সম্পদ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, আর বালুখেকোরা প্রশাসনের তৎপরতার মুখে দিশেহারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বালুখেকোরা যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, নৌপথে সরকারি সম্পদ লুটপাটকারী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২০০ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি দায়ের করেছেন ২৪০টি মামলা, যা উপজেলার ১৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রতিদিন মাদক, ইজারা বহির্ভূত বালু উত্তোলন, পরিবেশ আইন, ভোক্তা অধিকার ও সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে দায়ের হয়েছে ৭২টি মাদক মামলা। আদালতের মাধ্যমে সমসংখ্যক অপরাধী সাজা ভোগ করেছে, ফলে মাদক ও বালু-পাথর সিন্ডিকেটের সদস্যরা দিশেহারা। ইজারা বহির্ভূত নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত দায়ের হয়েছে ১৫টি মামলা, জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার ড্রেজার, বাল্কহেড, স্টিল নৌকা এবং ৫০ হাজার ঘনফুট বালু।
অপরাধ দমন কার্যক্রমের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। হাটবাজার মনিটরিং ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় ইউএনওয়ের কঠোর নীতি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তরা স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। মামলায় জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে ইসলামপুর ইউনিয়নের বদরুল ইসলাম ও বাবুল মিয়া, তাতীকোনা গ্রামের মো. তারেক, কোম্পানীগঞ্জ থানার মো. সাহাব উদ্দিন এবং তার ছেলে মো. যোবায়ের।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর ছাতকের হাদাঁ পান্ডব এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বন বিভাগ ও ভূমি অফিসের সমন্বয়ে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ড্রেজার জব্দ করা হয়। অভিযুক্তরা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেলেও মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতিকে মারাত্মক ক্ষতি করা হয়েছে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর স্রোত পরিবর্তিত হবে, বন্যার ঝুঁকি বাড়বে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। প্রশাসন জানিয়েছে, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একাধিক মোবাইল কোর্ট অভিযান চলমান রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘যত বাধা আসুক, আমি সরকারি সম্পদ রক্ষা করব। ইজারা বহির্ভূত নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন হতে দেব না।’