https://www.emjanews.com/

10350

national

প্রকাশিত

১০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১০

আপডেট

১০ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৩

জাতীয়

১৫ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর, বাস্তবায়নের পথে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১০

ছবি: সংগৃহীত।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে। এই অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

তবে সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি কমিশন। গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐকমত্য হলেও, গণভোটের সময়, পদ্ধতি ও আইনি কাঠামো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

গণভোট নিয়ে মতভেদ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও কমিশন বাস্তবায়নের প্রধান উপায় হিসেবে গণভোটকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শকে ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে এই সুপারিশ আরও বিস্তারিত ও নির্দিষ্ট করা হবে।

সূত্র জানায়, গণভোটের সময় নির্ধারণের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছে কমিশন। আগামী রোববারের মধ্যে সরকারকে বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়া হবে, যা জুলাই সনদের অংশ হবে না, বরং একটি পৃথক প্রস্তাব হিসেবে থাকবে।

দলগুলোর অবস্থান: আগে সুপারিশ দেখতে চায় সবাই

বিএনপি শুরু থেকেই বলছে, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যাবে না, বরং একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে গণভোটের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,

‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কী সুপারিশ দেয়, তা দেখেই আমরা পরবর্তী অবস্থান জানাব। জনগণ নিশ্চয়ই সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা বুঝতে পেরেছে।’

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ‘জুলাই বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। তাদের প্রস্তাব, আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা-সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও আইনসভা-দেওয়া উচিত।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,‘কমিশনের সুপারিশ না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে সংস্কার প্রক্রিয়াকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোটের প্রস্তাব দিচ্ছে-এটি জনগণ মেনে নেবে না।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন জানান, তারা বাস্তবায়নের উপায়, গণভোটের সময় ও ভিন্নমতের বিষয়ে কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেখে পরবর্তী অবস্থান নির্ধারণ করবেন।

বাস্তবায়নের ধাপ ও বিশেষজ্ঞ মত

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ প্যানেল একটি বিশেষ আদেশ জারি করে গণভোটের আয়োজন এবং আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি, সংবিধান সংশোধনের সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব আছে।

গণভোটে দুটি প্রশ্ন রাখার চিন্তা করছে কমিশন-

যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।

যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। দুই দফায় আলোচনায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নেয়, যেখানে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ঐকমত্য গড়ে ওঠে, যদিও কিছু প্রস্তাবে ভিন্নমত রয়ে গেছে।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,‘১৫ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এর আগেই কমিশন সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে বিস্তারিত সুপারিশ জমা দেবে।’