শুরু হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান: জাতীয় ঐকমত্যের পথে বড় পদক্ষেপ
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৫৩
ছবি: সংগৃহীত।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে শুরু হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই ঐতিহাসিক সনদে স্বাক্ষর হচ্ছে।
এই অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি সনদে স্বাক্ষর করবেন।
দীর্ঘ আলোচনার ফসল
প্রায় আট মাসব্যাপী তিন দফা আলোচনা শেষে তৈরি হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত হয় ছয়টি পৃথক কমিশন-
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।
এই কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল, জোট ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা চালায়। দুই দফায় ৬৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক শেষে মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জুলাই সনদের মূল বিষয়বস্তু
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর মূল লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠন।
সনদে নিম্নলিখিত কাঠামোগত ও আইনি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে-
সংবিধান সংস্কার: রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য পুনঃনির্ধারণ, সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার: স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, স্বচ্ছ ভোটব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বিচার বিভাগ সংস্কার: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি।
জনপ্রশাসন সংস্কার: যোগ্যতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রশাসনিক নিয়োগ ও বদলি নীতিমালা প্রণয়ন।
পুলিশ সংস্কার: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পেশাদার পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
দুর্নীতি দমন সংস্কার: দুর্নীতি দমন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও কার্যকর তদন্ত ক্ষমতা প্রদান।
ঐতিহাসিক পটভূমি
সনদের ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়কে ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের পর্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে সনদে বলা হয়েছে, জনগণের আত্মত্যাগ ও ঐক্যের ভিত্তিতেই এই পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে।
