https://www.emjanews.com/

10974

national

প্রকাশিত

৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪১

জাতীয়

জুলাই সনদ নিয়ে তীব্র মতভেদ, জটিল সমীকরণে দেশের রাজনীতি

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪১

ছবি: সংগৃহীত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশকে কেন্দ্র করে ফের জটিল সমীকরণে পড়েছে দেশের রাজনীতি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম মতবিরোধ। বিশেষ করে নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত না করা ও গণভোটের সময়সূচি নির্ধারণ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মধ্যে বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে।

এ ছাড়া কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবে অস্পষ্টতা ও ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্নে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কোন ক্ষমতাবলে আদেশ জারি করবেন-তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক রাজনৈতিক দল। ফলে সাড়ে আট মাসের পরিশ্রমসাধ্য কার্যক্রমের পরেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের ফলাফল নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে হতাশা ও অনিশ্চয়তা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ প্রস্তুতি ও আলোচনার পর কমিশন তাদের কাজ শেষ করলেও যেভাবে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, তাতে পুরো প্রক্রিয়া অর্থহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, এ সংকট দ্রুত সমাধান না হলে দেশ অস্থিতিশীলতার দিকে যেতে পারে এবং নির্বাচনের সময় নিয়েও তৈরি হতে পারে অনিশ্চয়তা।

তারা আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হলে হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাস। এর মধ্যেই রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থনৈতিক সংকট ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে সরকার কঠিন অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা।

দলগুলোর অবস্থান

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি-তিন দলই কমিশনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করে কমিশন সুপারিশ তৈরি করেছে।

জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করতে হবে।

এনসিপি চেয়েছে, প্রস্তাবগুলোর অস্পষ্টতা দূর করে দ্রুত সংবিধান সংস্কার বিল জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে।

বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি ঐকমত্য নয়, প্রতারণা।’
অন্যদিকে জামায়াতের নেতারা অবিলম্বে গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্য ছাড়া টেকসই সরকার সম্ভব নয়।’

আদেশ জারির ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রশ্ন তুলেছেন-‘প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে? রাষ্ট্রপতির নামে না হলে সেটি কার্যকর নয়। নিজে আদেশ জারি করলে সংবিধান স্থগিত করার শামিল।’  ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদও বলেছেন, ‘আদেশ জারির বিষয়ে খসড়ায় অস্পষ্টতা রয়েছে, যা বাধ্যতামূলক নয়।’

কমিশনের অবস্থান

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে যদি গণভোটে জুলাই সনদ পাশ না হয়। এটি পাশ করানো সবার দায়িত্ব।’

বিশেষজ্ঞদের মত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, কমিশন যদি জুলাই সনদটি আগের মতো উপস্থাপন করত, তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হতো না। তিনি বলেন, ‘এখনো সরকারের হাতে সুযোগ আছে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য ফিরিয়ে আনার।’

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘কমিশন দেশের রাজনীতি পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করে দিতে পারে না। জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া কেউ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে পারে না।’

গত ১২ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। সহসভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠকের মাধ্যমে কমিশন ৮২টি সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করে, যার ভিত্তিতে তৈরি হয় জুলাই সনদ।

১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো ওই সনদে স্বাক্ষর করলেও এনসিপিসহ কয়েকটি দল এখনো তা করেনি। এরপর মঙ্গলবার কমিশন সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের হাতে হস্তান্তর করে। কিন্তু সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নতুন করে গণভোট বিতর্কের বিস্তার।