https://www.emjanews.com/

11006

national

প্রকাশিত

৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৫২

জাতীয়

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

ঢাকাসহ অন্তত ১৭০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি, জোট রাজনীতিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৫২

ছবি: সংগৃহীত।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের শীর্ষপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে জোট না করলেও অভিন্ন এজেন্ডা ও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কিছু আসনে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপি ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে দলীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার সবুজবাগ-মতিঝিল বা ডেমরা কেন্দ্র থেকে, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব মিরপুর এলাকা থেকে, এবং চিকিৎসক ডা. তাসনিম জারা কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এছাড়া সামান্থা শারমিন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, নিভা, আকরাম হোসেনসহ শীর্ষ কয়েক নেতা রাজধানী ও আশপাশের আসন থেকে লড়বেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর, সারজিস আলম পঞ্চগড় ও হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই প্রাক্তন ছাত্রনেতাও পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের জন্য দলীয় পদ ও আসন নির্ধারণের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত।

বিএনপি ও জামায়াতের টানাটানি

রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী-দুই দলই এনসিপিকে নিজেদের জোটে আনতে আগ্রহী। উভয় দলই এরই মধ্যে অঘোষিতভাবে যোগাযোগ রাখছে এবং সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তত ২০টি আসনে বোঝাপড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এনসিপি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা জামায়াতের জোটে যোগ দেবে না এবং স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে জোট হবে কি না, সেটা রাজনীতির ময়দানেই নির্ধারিত হবে।’ অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ‘এনসিপিকে নিয়ে জোট করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে যোগাযোগ আছে।’

মতভিন্নতা ও টানাপোড়েন

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, গণভোট ইস্যু এবং উচ্চকক্ষে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির মতভিন্নতা তৈরি হয়। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগও এনসিপি তোলে। এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারীর জামায়াতবিরোধী মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে জোটবদ্ধ আলোচনা কিছুটা থেমে যায়।

স্বপ্ন ও সংকল্প

এনসিপি নেতাদের মতে, জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন না হলে পরিবর্তনের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। তাদের মতে, অভ্যুত্থানের পর সরকার পতন হলেও পুরনো রাজনৈতিক কাঠামো বা স্টাবলিশমেন্টের ধরণ বদলায়নি। অনেক নেতা মনে করেন, এনসিপি যদি ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দলের অস্তিত্বই ঝুঁকিতে পড়বে।

তাই স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রেখে নতুন রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে দলটি নির্বাচনে যাচ্ছে। এক নেতা বলেন, ‘জুলাইয়ের চেতনা আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক স্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।’