ছবি: সংগৃহীত।
টানা নয় মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল (১ নভেম্বর) থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটক যাতায়াত শুরু হচ্ছে। সরকার দুটি জাহাজ- এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়াকে এই রুটে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। প্রতিদিন দুই জাহাজে সর্বমোট দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন।
তবে দীর্ঘ ১৩-১৪ ঘণ্টা জাহাজে চড়ে পৌঁছালেও রাত যাপনের অনুমতি নেই। পর্যটকরা মাত্র এক ঘণ্টার জন্য দ্বীপে ঘুরে আবার ফেরার জন্য জাহাজে উঠতে হবে। এ কারণে পর্যটকদের মধ্যে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার আগ্রহ কম।
এদিকে পর্যাপ্ত যাত্রী না হলে জাহাজ চালাতে লোকসান হবে, তাই জাহাজমালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রথম থেকেই অনিশ্চয়তার কারণে ভ্রমণ শুরু করতে দ্বিধা প্রকাশ করছেন।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘নভেম্বর মাসে দুই হাজার পর্যটক কক্সবাজার থেকে দ্বীপে যাতায়াত করবেন। নুনিয়াছটাঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে ১৩-১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। জাহাজে ৮০০ জন ধারণক্ষমতার যাত্রীর জন্য খরচ পড়ে ১০ লাখ টাকার বেশি, কিন্তু অল্প যাত্রী থাকলে আয় হবে মাত্র ২-২.৫ লাখ টাকা। তাই এই অবস্থায় জাহাজ চালানো ব্যবসায়িকভাবে অসম্ভব।’
তিনি উল্লেখ করেন, উখিয়ার ইনানী সৈকতের জেটি ব্যবহার করলে দিনে গিয়ে ফেরার ব্যবস্থা সম্ভব হতো এবং পর্যটক অন্তত তিন ঘণ্টা দ্বীপে থাকত। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে এটি সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা জানান, নুনিয়াছটাঘাট ছাড়া অন্য কোনো জেটি থেকে পর্যটকবাহী নৌযান বা ট্রলার সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করতে পারবে না। পর্যটকরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনবেন। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। নকল টিকিট গ্রহণযোগ্য হবে না।’
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নভেম্বর মাসে দ্বীপে রাত যাপন নিষিদ্ধ, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত যাপনের সুযোগ থাকবে। এছাড়া, সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি করা, বারবিকিউ, কেয়াবনে প্রবেশ, সামুদ্রিক জীব ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি, মোটরচালিত যানবাহন চলাচল এবং প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল সমৃদ্ধ সেন্ট মার্টিনে পর্যটক আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ যাত্রা, রাত যাপনের সুযোগের অভাব এবং নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি। আগে টেকনাফ থেকে ৯-১১টি জাহাজে দিনে পাঁচ-ছয় হাজার পর্যটক যাতায়াত করতেন। তবে রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধ ও নাফ নদীতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সক্রিয়তা, গুলিবর্ষণ ও অপহরণের কারণে যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তর তিন বছর মেয়াদি ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পের আওতায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, কাছিমের ডিমপাড়া সংরক্ষণ, কেয়াবন সৃজন এবং দ্বীপের অতিদরিদ্র ৫০০ পরিবারকে মাসিক অনুদান দেওয়া হবে।
১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রণালয় দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
                        
                        